থানা ঘেরাওয়ে অশান্তির নালিশ,পাল্টা চক্রান্তের অভিযোগ বিজেপিরও

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার ওই ঘটনায় বিজেপির ছ’জনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। ঘটনার রেশ চলে শুক্রবারও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খণ্ডঘোষ শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:১২
Share:

—প্রতীকী চিত্র

সভায় যাওয়ার পথে তৃণমূলের লোকজন বাধা দিয়েছে অভিযোগ তুলে খণ্ডঘোষ থানা ঘেরাও করে বিজেপি। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার ওই ঘটনায় বিজেপির ছ’জনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। ঘটনার রেশ চলে শুক্রবারও।

Advertisement

পুলিশের অত্যাচারের অভিযোগে এ দিন সকাল ১০টা থেকে দামোদরের কৃষক সেতুর কাছে অবরোধ করে বিজেপি। ঘণ্টা দুয়েকের অবরোধে আরামবাগ, বাঁকুড়া রুটের বহু বাস, গাড়ি আটকে পড়ে। হয়রান হন যাত্রীরা। পরে বর্ধমান থানার পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে। তৃণমূল ও পুলিশের কর্তাদের একাংশের দাবি, বৃহস্পতিবার বিকেলে খণ্ডঘোষের কুমিরখোলায় সভার জন্য কোনও অনুমোদন নেয়নি বিজেপি। তার উপরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্য সভা হয়নি। সেই ঘটনা থেকে নজর সরাতেই দলের একটি গোষ্ঠী থানা ঘেরাও করে। যদিও বিজেপি অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।

এ দিন বর্ধমান আদালতে দাঁড়িয়ে বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ (খণ্ডঘোষ বিধানসভা বিষ্ণুপুর লোকসভার অন্তর্গত) অভিযোগ করেন, “আমাকে খণ্ডঘোষে ঢুকতে দেবে না বলে অফিসার ইনচার্জ চক্রান্ত করছেন। তিনি থানায় বসে তৃণমূলের দালালি করছেন। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।’’ অফিসার ইনচার্জ (খণ্ডঘোষ) প্রসেনজিৎ দত্ত অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা কাউকে আটকাইনি। তবে কেউ বিশৃঙ্খলা করতে চাইলে আমরা আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেবই।’’ জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক উত্তম সেনগুপ্তের কটাক্ষ, “সাংসদের মনে হয় মানসিক সমস্যা রয়েছে।’’

Advertisement

বিজেপি সূত্রে জানা যায়, ওই সন্ধ্যায় কুমিরখোলায় সভা করার কথা ছিল বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁয়ের। জেলা বিজেপির নেতাদেরও হাজির হওয়ার কথা ছিল সেখানে। সভায় যোগ দিতে বর্ধমান থেকে মোটরবাইকে একদল বিজেপির কর্মী, সমর্থক যাচ্ছিলেন। অভিযোগ, পুরো রাস্তা জুড়ে বিভিন্ন মোড়ে তৃণমূলের লোকজন দাঁড়িয়েছিল। কুমিরখোলা ঢোকার আগে আড়া মোড়ে ওই দলটিকে আটকে ‘মারধর’ করা হয়। দলে থাকা বিজেপির যুব নেতা শ্যামল রায়ের অভিযোগ, “রাস্তা আটকে লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়। খণ্ডঘোষ থানায় গেলে পুলিশও আমাদেরই মারধর করে।’’

জেলা পুলিশের যদিও দাবি, বিজেপির লোকেরা থানায় হামলা চালানোর চেষ্টা করেছিল। ওই থানার অফিসার ইনচার্জ প্রসেনজিৎ দত্ত একটি ‘সুয়োমোটো’ মামলা রুজু করেছেন। তাঁর অভিযোগ, এএসআই সৌমেন চন্দ্রের কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন, দু’টি দুষ্কৃতী দল খণ্ডঘোষ থানা মোড়ের কাছে বোম, রড, বাঁশ, ইট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। খবর পাওয়া মাত্র পুলিশ নিয়ে তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন, দু’পক্ষই উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে। শান্তি রক্ষার জন্য দু’পক্ষকেই উত্তেজনা কমানোর কথা বলা হচ্ছিল। সেই সময় হঠাৎ পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোঁড়া হয়, লোহার রড নিয়ে তাঁড়া করা হয় বলে তাঁর অভিযোগ। পুলিশ বাধ্য হয়ে পাল্টা তাড়া করে ওই ছ’জনকে ধরে। ধৃতদের কাছ থেকে বোমা, লোহার রড, বাঁশ, ভাঙা ইটের টুকরো বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। এ দিন বিকেলে বর্ধমান থেকে বাঁকুড়ার ইন্দাস যাওয়ার পথে ওই গ্রামে যান সৌমিত্র খাঁ।

বিজেপির জেলা সাংগঠনিক সভাপতি (বর্ধমান সদর) সন্দীপ নন্দী বলেন, “লোকসভা ভোটের আগে থেকে খণ্ডঘোষে তৃণমূলের অত্যাচার চলছে। ভোটের সময়ে আমাদের প্রার্থীকে বারবার আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। সাংসদ হওয়ার পরেও তাঁকে এলাকায় ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।’’ তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তথা জেলা পরিষদের সদস্য অপার্থিব ইসলাম পাল্টা দাবি, “বৃষ্টির দিনে কেউ বাড়ি থেকে বার হননি। বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের গোলমাল আমাদের ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement