আসানসোলে সাংবাদিক বৈঠকে মিঠুন চক্রবর্তী। — নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বাম এবং কংগ্রেসের হাত ধরার পক্ষেই সওয়াল করলেন অভিনেতা তথা বিজেপি নেতা মিঠুন চক্রবর্তী। শনিবার আসানসোলে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের পাশে বসে এমন বার্তাই দিয়েছেন তিনি। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া সফর সেরে শনিবার মিঠুন পৌঁছন পশ্চিম বর্ধমানে। সেখানে একাধিক কর্মসূচি ছিল তাঁর।
পঞ্চায়েতে বামেদের সঙ্গে জোট হতে পারে কি, মিঠুনকে এমন প্রশ্ন করা হয়। জবাবে মিঠুন বলেন, ‘‘আনুষ্ঠানিক ভাবে এটা বলা যায় না। কিন্তু, একটা কথা বলছি, তৃণমূল যখন সরকারে এসেছে তখন সকলে একজোট হয়েছিল সিপিএমকে হারানোর জন্য। তৃণমূল, কংগ্রেস, এমনকি, তখন বিজেপি খুব ছোট শক্তি হলেও পিছন থেকে সমর্থন করেছিল। এটা এখন অস্বীকার করে লাভ নেই। তেমনই এমন একটা শক্তিকে হারাতে গেলে সকলের একসঙ্গে আসা উচিত।’’ মিঠুনের ব্যাখ্যা, ‘‘আদর্শগত ভাবে আমরা আলাদা হতে পারি। সেই জায়গাটা থাক। কিন্তু এমন একটা শক্তিকে হারাতে আমাদের একসঙ্গে আসা উচিত। এটাই আমার বার্তা।’’ পাশাপাশি, মিঠুনের ‘বিধিসম্মত সতর্কীকরণ’, ‘‘আমি মুখপাত্র নই, এটা আনুষ্ঠানিক ভাবে বলতে পারব না।’’
ঘটনাচক্রে ওই একই সাংবাদিক বৈঠক থেকেই আত্মবিশ্বাসের সুরে মিঠুন বলেন, ‘‘অবাধ নির্বাচন হলে শুধু পঞ্চায়েত নয়, জোর গলায় বলছি, কালকে বিজেপি সরকার গড়বে। পঞ্চায়েত খুব ছোট ব্যাপার।’’
মিঠুনের মহাজোট তত্ত্ব নিয়ে তাঁকে কড়া আক্রমণ করেছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘তিনি (মিঠুন) স্বীকার করে নিচ্ছেন, কোনও দলের পক্ষেই তৃণমূলকে হারানো সম্ভব নয়। তিনি যে দলের বায়না নিয়ে এসে শীতকালের বাজারে মঞ্চে মঞ্চে অভিনয় করে বেড়াচ্ছেন, সেই দল যে একা কিছুই করতে পারবে না সেটা তাঁর বক্তব্যেই প্রমাণিত। দ্বিতীয়ত, ২০১৪ সালে যে দলের তরফে তিনি রাজ্যসভায় গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আমাকে কেউ কখনও সম্মান দেয়নি। আমার বোন মমতা আমাকে সম্মান দিল। আজীবন এই কৃতজ্ঞতা মনে রাখবে মমতার ভাই মিঠুন।’ তা হলে ভাইবোনের সম্পর্ক নস্যাৎ করে দিয়ে বোনের পিঠে ছুরি মারতে নামলেন কোন কোন কেলেঙ্কারি থেকে তাঁকে বিজেপি বাঁচাবে এই আশায়, এটা মানুষকে বলতে হবে।’’
ঘটনাচক্রে মিঠুনের মহাজোট তত্ত্বের আগেই বাম এবং বিজেপি হাত ধরাধরি করে ‘সমবায় বাঁচাও মঞ্চ’ গড়ে লড়াইয়ে নেমেছিল পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমার এবং মহিষাদলে দু’টি সমবায় নির্বাচনে। তার মধ্যে নন্দকুমারের সমবায় সমিতিতে ওই জোট জয় পেলেও তা মুখ থুবড়ে পড়েছে মহিষাদলে। কিন্তু তাতে ধাক্কা দিয়েছে সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুরে সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহির বক্তব্য। তিনি বলেন, ‘‘সমবায় সমিতির ভোটে কোনও ভাবেই বিজেপির সঙ্গে জোট বা আসন সমঝোতা করে লড়াই করা যাবে না বলে জেলায় দলের সব এরিয়া কমিটিকে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত না মানলে সংশ্লিষ্ট নেতৃত্বদের বিরুদ্ধে দলীয় ভাবে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’ ফলে, আদর্শগত দিক থেকে সাফল্যের সেই ‘নন্দকুমার মডেল’-এর মধ্যে যে বিপদের আশঙ্কা লুকিয়ে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে তা আঁচ করেছে বামশিবির। অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় স্তরে বিজেপির সঙ্গে ‘কুস্তি’র সম্পর্ক কংগ্রেসের। সে ক্ষেত্রে রাজ্যে তারা ‘দোস্তি’র পথে হাঁটবে কি না, তা নিয়েও রয়েছে অপার সংশয়।