West Bengal Panchayat Election 2023

লড়াই দিতে ৪৩ জনের দল বিজেপির

দলটিতে বিধায়ক, প্রাক্তন বিধায়ক, পুরপ্রতিনিধি, প্রাক্তন পুরপ্রতিনিধি, জেলা থেকে মণ্ডল স্তরের নেতারা থাকছেন।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২৩ ০৮:৫৪
Share:

—প্রতীকী চিত্র। Sourced by the ABP

সম্প্রতি সামনে এসেছিল, দলীয় নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও, বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলার ৩৭টির মধ্যে পঞ্চায়েত এলাকায় থাকা ১০টি মণ্ডলে তারা কার্যকারিণী সভা আয়োজন করতে পারেনি। এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও জেলা নেতৃত্ব সন্ত্রাসের অভিযোগ করছেন বরাবরই। এই পরিস্থিতিতে সূত্রের দাবি, জেলার ৬২টি পঞ্চায়েতের জন্য ৪৩ জনের একটি ‘বিশেষ দল’ গড়েছে বিজেপি। এই দলটির মূল লক্ষ্য, সমন্বয় রক্ষা করে চলা। তবে বিজেপির এ সব দল গড়াকে আমল দিতে রাজি নয় তৃণমূল ও সিপিএম।

Advertisement

দলটিতে বিধায়ক, প্রাক্তন বিধায়ক, পুরপ্রতিনিধি, প্রাক্তন পুরপ্রতিনিধি, জেলা থেকে মণ্ডল স্তরের নেতারা থাকছেন। দলটির সদস্যেরা প্রতিনিয়ত তৃণমূলের সঙ্গে ‘লড়াই করে’ সংগঠনের প্রসারে ইতিমধ্যেই কাজ করছেন, দাবি বিজেপির। তাঁরা জেলার ৬২টি পঞ্চায়েতে প্রার্থীদের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তুলবেন ও দলীয় কর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করবেন। মূলত বিধানসভা ভিত্তিক দল তৈরি করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভায় যে দল দায়িত্বে রয়েছে, সেটির নেতৃত্বে রয়েছেন সেখানকার প্রাক্তন বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি। অর্থাৎ, বিধানসভা নির্বাচনের মতো পঞ্চায়েত নির্বাচনেও জিতেন্দ্র এবং তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা স্থানীয় বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর মধ্যে জোর টক্কর দেখা যাবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহল। প্রসঙ্গত, পাণ্ডবেশ্বর ও দুর্গাপুর-ফরিদপুর, এই দু’টি ব্লক নিয়ে পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভা এলাকা। সে ক্ষেত্রে এই দুই ব্লকের দায়িত্বেই থাকবেন জিতেন্দ্র। রানিগঞ্জ বিধানসভার অন্ডাল এলাকার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক তথা দুর্গাপুর পশ্চিমের বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইকে। আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভার রানিগঞ্জ ব্লকের দায়িত্বে থাকবেন বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভার অন্তর্গত কাঁকসা এলাকার দায়িত্বে থাকবেন দলের জেলা সহ-সভাপতি তথা দুর্গাপুরের প্রাক্তন পুরপ্রতিনিধি চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ছাড়া, জামুড়িয়ায় কুলটির বিধায়ক অজয় পোদ্দার এবং বারাবনিতে জেলা সভাপতি দিলীপ দে থাকছেন। জিতেন্দ্র ও চন্দ্রশেখরের সঙ্গে পাঁচ জন করে, অজয় ও লক্ষ্মণের সঙ্গে আট জন করে, দিলীপের সঙ্গে সাত জন ও অগ্নিমিত্রার সঙ্গে চার জন করে নেতা থাকছেন।

কিন্তু কেন দল গঠনের দরকার পড়ল? বিজেপি সূত্রে জানা যাচ্ছে, এটির মূল কাজ— কোথাও সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠলে সেখানে যাওয়া, যেখানে যা অভিযোগ জানানোর, তা দ্রুত জানানো এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার দলীয় কর্মীদের পাশে থাকা। ঘটনা হল, ইতিমধ্যেই জিতেন্দ্রকে তাঁর দায়িত্বে থাকা এলাকায় দলের লোকজনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়ে সমস্যার কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে সরব হতে দেখা গিয়েছে। সূত্রের দাবি, বিশেষ ভাবে নজরে রাখা হচ্ছে পাণ্ডবেশ্বর, বারাবনির মতো তৃণমূলের ‘সন্ত্রাস কবলিত এলাকাগুলির’ দিকে। পাশাপাশি, এই দলটি গঠনের আরেকটি উদ্দেশ্য হল স্থানীয় ভাবে প্রচার-কৌশল নির্ধারণ। সেখানে বিশেষ ভাবে তৃণমূলের প্রচারের পাল্টা রণকৌশল তৈরি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পগুলির বিষয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

২০১৯-এর লোকসভা এবং ২০২১-এর বিধানসভা ভোটেও পাণ্ডবেশ্বর, জামুড়িয়া, বারাবনি, এই তিনটি ব্লকের বহু পঞ্চায়েতেই ভোটের নিরিখে এগিয়ে ছিল বিজেপি। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে পাণ্ডবেশ্বর ব্লকের ছ’টি পঞ্চায়েতের মধ্যে পাঁচটি পঞ্চায়েত থেকে এক প্রধান-সহ ১৬ জন পঞ্চায়েত সদস্য বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে তিন জন আবার ২০২১-এর ভোটের ফলের পরে তৃণমূলে ফিরে যান। ২০১৮-য় পঞ্চায়েত ভোটে জেলায় বিজেপি ১৩টি সংসদে জিতলেও সালানপুরে দু’জন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের আশা, এ ভাবে দল গেড়ে সাংগঠনিক ও ভোট-রাজনীতি, উভয় ক্ষেত্রেই সুফল মিলতে পারে। কার্যত সে কথারই প্রতিফলন লক্ষ্মণের কথাতেও।বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচন যাতে স্বচ্ছ হয়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। মানুষ যাতে নিজের ভোট নিজে দিতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। তাই দলীয় প্রার্থী ও স্থানীয় কর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করবেন দলের নেতারা।”

যদিও তৃণমূল ও সিপিএম বিজেপির এই দল গঠনকে আমল দেয়নি। তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, “নির্বাচনের সময় পরিযায়ী পাখির মতো এলে হবে না। তাই ওরা কী করল, তা নিয়ে ভাবার সময় নেই।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারের আবার তোপ, “তৃণমূল ও বিজেপি যে একই মুদ্রার দু’পিঠ, সেটা সাধারণ মানুষ বুঝে গিয়েছেন। ফলে এখন এ সব দল গড়ে মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা বিজেপি চাইলেও করতে পারবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement