দুর্গাপুর থানায় ঢোকার চেষ্টা করছেন বিজেপি নেতা-কর্মীদের একাংশ। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
‘দলীয়’ কর্মী স্বরূপ সৌ (৩৩)-এর মৃত্যুতে জড়িত ‘দোষীদের’ গ্রেফতারের দাবিতে মঙ্গলবার দুর্গাপুর থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখালেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। ছিলেন দলের রাজ্য সহ-সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুই। তবে মৃতের পরিবারের দাবি, স্বরূপ ‘সে ভাবে’ কোনও দল করতেন না। তাঁরা এই মৃত্যুর ঘটনা নিয়েরাজনীতি চান না।
এ দিনের বিক্ষোভেও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সরব হন রাজুবাবু। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করতে পারত। কিন্তু তা হলে তৃণমূলের লোকজন ধরা পড়বে। তাই মামলা হয়নি। অথচ, আমাদের আন্দোলনে এক শ্রেণির পুলিশ লাঠি চালাচ্ছে। সেই সব পুলিশের পেটের ভাত আমরা কেড়ে নেব। সতর্ক করে দিচ্ছি।’’ পাশাপাশি, স্বরূপবাবুর পরিবারের লোকজনকে অভিযোগ না করার জন্য পুলিশ দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ বিজেপি নেতৃত্বের। কিন্তু বিজেপি কেন অভিযোগ করেনি? রাজুবাবুর দাবি, ‘‘রাজ্য পুলিশে আস্থা নেই। সিবিআই-তদন্ত চাই।’’
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্ত বলেন, ‘‘পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ভিত্তিহীন। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে তদন্ত চলছে।’’সোমবার সকালে ফরিদপুর (লাউদোহা) থানার প্রতাপপুর পঞ্চায়েত কার্যালয়ের পিছন থেকে উদ্ধার হয় রবিবার বিকেল থেকে নিখোঁজ স্বরূপের দেহ। বিজেপির দাবি, স্বরূপকে তাদের দলে যাওয়ার জন্য লাগাতার চাপ দেওয়া হয় তৃণমূলের তরফে। এই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাঁকে তৃণমূলের লোকেরা খুন করেছে। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার থানা ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। বেলা ১১টা নাগাদ দুর্গাপুর থানার সামনে জড়ো হন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। আসেন রাজুবাবুও। একই কর্মসূচি পালিত হয় আসানসোল দক্ষিণ থানায়,কুলটির নিয়ামতপুরেও।
এ দিন রাজুবাবু দলের জেলা সভাপতি লক্ষ্ণণবাবুকে নিয়ে স্বরূপের বাড়িতে যান। মৃতের মা সুলোচনাদেবী রাজুবাবুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘কী করে ছেলের মৃত্যু হল জানি না। আমার ছেলেকে কি ফিরিয়ে দিতে পারবেন?’’ তাঁর দাবি, ‘‘ওর মানসিক সমস্যা ছিল। কখনও তৃণমূলের পতাকা ধরত। কখনও বিজেপির পতাকা ধরত।’’ দুই দলের মিছিলেই যেত বলে দাবি করেছেন মৃতের দাদা অরূপবাবুও। তিনি বলেন, ‘‘রাজনীতির সঙ্গে ভাইয়ের মৃত্যুর কোনও যোগ আছে কি না, বলতে পারব না। ও সে ভাবে কোনও দল করত না। দুই দলের মিছিলেই যেত। আমাদের বাড়িতে তৃণমূলের নেতারাও এসেছিলেন। বিজেপি নেতারাও এসেছেন। পুলিশ তদন্ত করুক। কিন্তু ওর মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি চাই না।’’
বাইরে বেরিয়ে রাজুবাবু বলেন, ‘‘আমরা রাজনীতি করতে আসিনি। নিরীহ পরিবার। এলাকার সবাই জানেন, স্বরূপ বিজেপির সক্রিয় কর্মী ছিলেন। পরিবারের পাশে আমরা আছি, সেই বার্তা দিয়েছি।’’ বিজেপির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন বলেন, ‘‘এলাকার ক্ষমতা কার হাতে থাকবে তা নিয়ে নিজেদের দ্বন্দ্বেই মারা পড়ছেন বিজেপির কর্মীরা। চক্রান্ত করে দোষ চাপানো হচ্ছে তৃণমূলের উপরে।’’