bardhaman university

টাকা বাকি থাকায় কাজ বন্ধ সংস্থার, অচলাবস্থা

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, স্নাতক স্তরের প্রথম সিমেস্টারের পরীক্ষার নির্দিষ্ট সময় শেষ হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় সিমেস্টারের ক্লাস চালু হওয়ার কথা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৩ ০৯:০০
Share:

সমস্যায় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। — ফাইল চিত্র।

ভর্তি থেকে ফল প্রকাশ, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের পরীক্ষার যাবতীয় তথ্যপ্রযুক্তি কাজ যে আন্তর্জাতিক মানের সংস্থা করে থাকে, তার সঙ্গে চুক্তিতে ‘ত্রুটি’ রয়েছে বলে প্রশ্ন তুলেছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিট বিভাগ। ওই সংস্থার দেওয়া পাঁচ কোটি ২৪ লক্ষ টাকার বিল আটকে গিয়েছে। যার জেরে ওই সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত কাজ থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছে। ফলে, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরস্তরের পরীক্ষা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। স্নাতকস্তরের দুটি সিমেস্টারের খাতা দেখা হওয়ার পরেও ফল বার করা যায়নি। জটিলতা কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় স্বাভাবিক হবে কবে, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে।

Advertisement

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিমাই সাহা বুধবার বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। যে সমস্যা দেখা দিয়েছিল, তা খুব তাড়াতাড়ি কেটে যাবে।’’

এ দিন বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজ়িকিউটিভ কমিটির (ইসি) বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে উপস্থিত সদস্যরা প্রশ্ন তোলেন, স্নাতকোত্তর স্তরে ৩৮টি বিভাগে ছ’হাজারের মতো পড়ুয়া রয়েছে। ওই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা সাহায্য না করলেও বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি পরীক্ষা নিতে পারবে। কিন্তু স্নাতকস্তরে পূর্ব বর্ধমান, বীরভূম ও হুগলি জেলার ৬৪টি কলেজের দেড় লক্ষ পরীক্ষার্থীর ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব নয়। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, স্নাতক স্তরের প্রথম সিমেস্টারের পরীক্ষার নির্দিষ্ট সময় শেষ হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় সিমেস্টারের ক্লাস চালু হওয়ার কথা। কিন্তু প্রথম সিমেস্টারের পড়ুয়াদের রোল নম্বরই তৈরি হয়নি। অ্যাডমিট কার্ডও তৈরি করেনি ওই সংস্থা। ইসি-র এক সদস্য বলেন, ‘‘কলেজগুলির কাছেও পড়ুয়াদের সম্পর্কে কোনও হার্ড কপি নেই। আবার নতুন করে অনলাইন পদ্ধতিতে পড়ুয়া সম্পর্কিত তথ্য তুলবে, সেই পরিকাঠামোও গড়ে ওঠেনি। ফলে স্নাতকস্তরের পরীক্ষা নিয়ে আমরা চিন্তায় আছি।’’

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কলেজের অধ্যক্ষরা দাবি করেন, প্রথম সিমেস্টারের পরীক্ষায় দেরি হবে বুঝতে পেরে তাঁরা দ্বিতীয় সিমেস্টারের ক্লাস শুরু করার কথা বলেছিলেন পড়ুয়াদের। কিন্তু কোনও পড়ুয়া কলেজে ক্লাসে আসছেন না। প্রত্যেকেই বলছেন, আগে প্রথম সিমেস্টারের পরীক্ষা নিন। পরীক্ষা না হওয়ায় নিয়ম মেনে দ্বিতীয় সিমেস্টারের ক্লাস করার জন্য বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া যাচ্ছে না, দাবি তাঁদের। এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে উপাচার্য বৈঠক করেন। সেখানে অ্যাডমিট কার্ড ছাড়া স্নাতকোত্তর স্তরে পরীক্ষা নিতে হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। প্রথম সিমেস্টারের পরীক্ষা অ্যাডমিট কার্ডের ব্যবস্থা করেই নিতে হবে বলে তাঁরা দাবি করেন।

একাধিক ছাত্র সংগঠন ও কর্মচারী সংগঠনও এ দিন উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সমস্যা কাটিয়ে পরীক্ষা ব্যবস্থা সচল করার দাবি জানায়। পশ্চিমবঙ্গ কলেজ শিক্ষাকর্মী ইউনিয়নের পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্বীকার করতে চাইছেন না। কিন্তু সমস্যার কথা এখন আর গোপন নেই। কোনও কারণ ছাড়াই একের পর এক পরীক্ষাবাতিল হচ্ছে।

ছাত্র সংগঠন এসএফআইও দাবি করেছে, স্নাতকোত্তর স্তরে অ্যাডমিট দেওয়া হয়নি। ঠিক সময়ে পরীক্ষা ও ফল প্রকাশ না হলে পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ সঙ্কটে পড়বে। কেন্দ্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় তাঁরা বসতে পারবেন না। এআইডিএসও-র তরফে স্মারকলিপি দিয়ে দাবি করা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে অরাজকতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার জন্য পড়ুয়ারা হতাশহয়ে পড়ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি, অচলাবস্থা কাটানোর জন্য ইসি একটি কমিটি গঠন করেছিল। সেই কমিটি জানিয়েছে, ওই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তিতে পদ্ধতিগত ত্রুটি রয়েছে। ত্রুটি না কাটিয়ে বিল দেওয়া ঠিক হবে না বলে আপত্তি করা হয়েছে। এ দিনের বৈঠকে ঠিক হয়, ওই রিপোর্ট রাজ্য সরকারের অডিট সংস্থার কাছে পাঠিয়ে পরামর্শ নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য আশিস পাণিগ্রাহী বলেন, ‘‘ওই সংস্থার সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা পোর্টাল খুলে দিতে রাজি হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement