সমস্যা মেটানোর আশ্বাস প্রথম দিনে
Bardhaman University

বিতর্কের মধ্যেই দায়িত্ব নিলেন নতুন উপাচার্য

গৌতমবাবু বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই প্রাণিবিদ্যায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হন। ১৯৯২ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় পিএইডি করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:২০
Share:

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য গৌতম চন্দ্র। —নিজস্ব চিত্র।

কয়েক বছর আগে তৎকালীন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিলেন। তা মানেনি রাজ্য সরকার। সোমবার রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের নির্দেশে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে যোগ দিলেন সেখানকার প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গৌতম চন্দ্র। প্রথম দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন রাজবাটীতে বিক্ষোভ দেখাল এসএফআই।

Advertisement

প্রায় দু'মাস ধরে উপাচার্যহীন অবস্থায় ছিল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। উপাচার্য না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজ়িকিউটিভ কমিটি (ইসি), র‍্যাগিং-বিরোধী কমিটির মতো বেশ কিছু ইউজিসি নির্দেশিত কমিটি ‘অকেজো’ ছিল। আটকে ছিল অর্থ সংক্রান্ত নানা ফাইল। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত দু’মাসে বড়-ছোট মিলিয়ে প্রায় দু’শোর মতো ফাইল উপাচার্যের টেবিলে জমা পড়েছে। এ দিন নতুন উপাচার্য বলেন, ‘‘ছাত্র, গবেষক, শিক্ষক, সব মিলিয়ে আমার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ৩৮ বছরের সম্পর্ক। এই বিশ্ববিদ্যালয় আমার পরিবার। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব পেয়ে ভাল লাগছে। আবার চিন্তাও হচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সমস্যা থাকে। আলোচনা আর সবার সঙ্গে কথা বলে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বিভিন্ন কমিটিগুলি যাতে কাজ করতে পারে, তার ব্যবস্থা করব। তবে এ কথা বলতে পারি, বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কোনও সমস্যা থাকবে না।’’

বিরোধীদের দাবি, গৌতমবাবু আরএসএস প্রভাবিত শিক্ষক ও গবেষক সংগঠনের উচ্চ পদে রয়েছেন। যাদবপুরের নতুন উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ সেই সংগঠনের সভাপতি। রাজ্যপাল শিক্ষাক্ষেত্রে গৈরিকীকরণ করতে চাইছেন বলেও অভিযোগ তাঁদের। কিন্তু গৌতমবাবুর দাবি, ‘‘আমি কোনও রাজনীতি বা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নই।’’

Advertisement

গৌতমবাবু বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই প্রাণিবিদ্যায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হন। ১৯৯২ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় পিএইডি করেন। যদিও তাঁর গবেষণাস্থল ছিল কলকাতার ট্রপিক্যাল মেডিসিন। ২০০৯ সালে ওড়িশার সম্বলপুর থেকে ডিএসসি করেন। মশা-বিশেষজ্ঞ হিসেবে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর, নিউটাউন ও নবদিগন্তের পরামর্শদাতা তিনি। বর্ধমান শহরের বাসিন্দা গৌতমবাবু ১৯৯১ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিদ্যা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। ২০০৫ সালে বিভাগীয় প্রধান হন। ২০১৭ সালে রাজ্য সরকারের ‘শিক্ষারত্ন’ পুরস্কার পান তিনি। ‘ভেক্টর বর্ন ডিজ়িজ়’-এর উপর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কেন্দ্রীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরেও পুরস্কৃত হয়েছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, রাজ্য সরকারের উচ্চ-শিক্ষা সংক্রান্ত কমিটির তিনি সদস্য ছিলেন। করোনা সংক্রান্ত রাজ্য সরকারের বেলঘাটা আইডি হাসপাতালের ‘এথিক্স কমিটি’র চেয়ারম্যানও ছিলেন চার বছর।

এ দিন গৌতমবাবুকে অভ্যর্থনা জানানোর পরে সহ-উপাচার্য আশিস পাণিগ্রাহী বলেন, ‘‘যাদবপুরের ঘটনার পরে র‍্যাগিং-বিরোধী ও হস্টেল সংক্রান্ত নানা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এ বার সেই সব সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে অসুবিধা হবে না বলেই মনে করছি।’’ রেজিস্ট্রার সুজিত চৌধুরীও বলেন, ‘‘উপাচার্য না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিল। একাধিক কমিটির বৈঠক আটকে ছিল। এ বার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসবে।’’

এ দিনই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা-সংক্রান্ত নানা সমস্যা তুলে ধরে পরীক্ষা নিয়ামক দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখায় এসএফআই। তাদের দাবি, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক স্তরের ষষ্ঠ সিমেস্টারের ফল অনলাইনে প্রকাশ করা হলেও তার কোনও হার্ড কপি দেওয়া হয়নি। ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা ফর্ম ফিলাপ করতে পারছেন না। অন্য দিকে, প্রথম ও তৃতীয় সিমেস্টারের ফলও বেরোয়নি। কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ডিজ়াইনের ছাত্রছাত্রীদেরও তৃতীয় সিমেস্টার থেকে সপ্তম সিমেস্টারের মার্কশিট দেওয়া হয়নি, দাবি এসএফআইয়ের পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্পাদক অনির্বাণ রায়চৌধুরীর।

উপাচার্য বলেন, ‘‘এ সব সমস্যা মেটানোর জন্য আমি সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথা বলব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement