পলিথিনের ছাউনির নীচেই বেচা-কেনা। নিজস্ব চিত্র।
বৃষ্টি মাথায় বাজারে গিয়েছিলেন। আচমকা মাকড়সার জালের মতো ইলেকট্রিক তারে ছাতা লেগে বিপত্তি।
চিত্র দুই: প্লাস্টিকের জিনিসপত্র ডাঁই করে রাখা এক জায়গায়। শুধু তাই নয়, প্লাস্টিকের ছাউনির তলাতেই রমরমিয়ে চলছে বিকিকিনি। —অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে এমন বেহাল চিত্রগুলো কাটোয়ার বিভিন্ন বাজারের। বাসিন্দাদের বড় অংশের অভিযোগ, কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের পরেও বাজারগুলির ক্ষেত্রে কোনও পদক্ষেপই করেনি প্রশাসন। উদাসীন ব্যবসায়ীদের একাংশও।
শতাব্দী প্রাচীন নীচু বাজারের নিউমার্কেটে প্রায় সাড়ে ৪৫০ স্টল রয়েছে। বাজার ঘুরে দেখা গেল, কোথাও ফুটো টিনের চালে পলিথিনের ত্রিপল টাঙিয়ে জোড়াতালি দেওয়া হয়েছে। কোথাও, মাছ বিক্রেতার মাথার উপরেই ঝুলছে বিদ্যুতের তার। বিদ্যুতের প্যানেল বাক্সটিও বন্ধ নেই। এই বাজারেই তিন পুরুষ ধরে ব্যবসা করছেন দিলীপ সাহা, ষষ্ঠী দাস, ভোলা মোদকেরা। অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তাঁদের সাফ জবাব, ‘‘এ ভাবেই তো চলছে! কখনও আগুন তো লাগেনি।’’ সূরজ শেখ নামে এক জন অবশ্য জানান, আগুন লাগলে কী ভাবে বেরোবেন জানা নেই।
স্টেশন বাজারের হাজি নওয়াজ মার্কেট ও দীনবন্ধু মার্কেটে প্রায় সাড়ে তিনশো দোকান রয়েছে। বেসরকারি এই বাজার দু’টিতেও যেখানে-সেখানে সেখানেও ডাঁই হয়ে পড়ে রয়েছে প্লাস্টিকের ট্রে ও পলিথিনের ত্রিপল। বাজারে অগ্নি নির্বাপণের ন্যূনতম কোনও ব্যবস্থা নেই বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। প্রায় এক দশক আগে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন ধরেছিল দীনবন্ধু মার্কেটে। সে যাত্রা কোনও বিপত্তি না হলেও অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ অজিত অজিত বণিক, গৌর বণিকদের মতো ব্যবসায়ীদের। একই হাল স্থানীয় একটি ক্লাব পরিচালিত রুদ্র মার্কেটেও। তবে দীনবন্ধু মার্কেটের বাজার কমিটির সেক্রেটারি ধানু বাগের আশ্বাস, ‘‘বিষয়টি নিয়ে দমকল ও মহকুমা প্রশাসনের কাছে দরবার করা হবে।’’
বাস স্ট্যান্ডের উল্টো দিকে রয়েছে পুরসভা পরিচালিত নেতাজি পৌরবাজার। সেখানে আগুন নেভানোর যন্ত্র থাকলেও প্যানেল বাক্সের প্লাগ খোলা। নিত্যানন্দ ঘোষ নামে এক ব্যবসায়ীর ক্ষোভ, ‘‘প্রায় ৩৫ বছরের পুরোনো বাজারে এক দশক আগে বিপদঘণ্টা বসানো হয়। কিন্তু সে সব আর কাজ করে না মনে হয়।’’
দমকল কর্তাদের সূত্রে জানা গিয়েছে, বেসরকারি বাজারগুলির ‘ফায়ার লাইসেন্স’ নেই। বেশ কয়েকটি গজিয়ে ওঠা ছোট বাজারে আচমকা আগুন ধরলে বেরিয়ে আসার পথও নেই বলে জানা গিয়েছে। মহকুমাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি যদিও জানান, ‘‘হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের পরে বিষয়টি নিয়ে বিধায়ক, পুলিশ আধিকারিক ও দমকলের সঙ্গে আলোচনা হয়। উৎসবের পরে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’