—নিজস্ব চিত্র।
রাঢ়বঙ্গের নানা জেলা থেকে এসেছিলেন ওঁরা— বন্যপ্রাণপ্রেমীর দল। ছিলেন বন দফতর এবং পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারাও। তাঁদের নিয়ে জঙ্গলমহলের বন্যপ্রাণ রক্ষায় কর্মশালা এবং সচেতনতা শিবিরের আয়োজন হল পশ্চিম বর্ধমানের শিল্পশহরে। নিজেদের এলাকায় নানা বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণ সংরক্ষণে ও তথ্যায়নের জন্য কাজ করার সুবাদে দুর্গাপুর তথা দক্ষিণবঙ্গের পরিচিত বন্যপ্রাণ সংরক্ষণকারী সংগঠন ‘ওয়াইল্ডলাইফ ইনফরমেশন অ্যান্ড নেচার গাইড সোসাইটি’ (উইংস)-র পঞ্চম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে তাঁদের মধ্যে দু’জনকে সংবর্ধনাও জানানো হল।
ইইউসিএন-এর লাল তালিকায় থাকা ভারতীয় ধূসর নেকড়েদের আবাসভূমি হিসাবে ইতিমধ্যেই পূর্ব ভারতে পরিচিতি পেয়ে গিয়েছে দুর্গাপুরের অদূরের লাউদোহা-ঝাঝরা বনাঞ্চল। বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার’ (ডব্লিউডব্লিউএফ)-এর সহযোগিতায় ধারাবাহিক ভাবে তাদের সংরক্ষণের কাজ করছে পশ্চিম বর্ধমান বনবিভাগ এবং উইংস। রয়েছেন ভারতীয় প্রাণী সর্বেক্ষণ (জেডএসআই)-এর বিজ্ঞানীরাও। বন্যপ্রাণপ্রেমীদের ওই কর্মশালায় ভারতীয় ধূসর নেকড়ে সংরক্ষণের প্রাথমিক পাঠও দেওয়া হল। বনবিভাগের আধিকারিকদের পাশাপাশি কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনার অভিষেক গুপ্ত, খড়্গপুর আইআইটির অধ্যাপক গৌরব ধর ভৌমিক, এসার অয়েলের সুকান্ত রায়।
বন দফতরের আধিকারিক বিদ্যুৎ সরকার এবং কল্যাণ দাস কর্মশালায় জোর দিলেন মানুষের সঙ্গে নেকড়ে-সহ রাঢ়বঙ্গের বিভিন্ন প্রাণীর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে তাদের সংরক্ষণের উপর। আঞ্চলিক বন্যপ্রেমী সংস্থাগুলির এই সংরক্ষণে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, তার প্রশংসা করলেন বনকর্তারা। আগামী দিনে আর কোন কোন প্রজাতির সংরক্ষণে রাঢ়বঙ্গের জেলাগুলিতে কাজের সম্ভাবনা রয়েছে তার দিশাও পাওয়া গেল এই অনুষ্ঠানে। নেকড়ে পাশাপাশি হায়না, বনবিড়াল, বুনো শুয়োর, খরগোশ এমনকি নীলগাইয়ের মতো বন্যপ্রাণীও দুর্গাপুর শহরের পড়শি বলে জানালেন উইংসের সদস্য অর্কজ্যোতি মুখোপাধ্যায়, মণীশ চট্টোপাধ্যায়, অর্ণিশ বসুরা।
কয়েক দশক আগেও রাঢ়বঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ছিল ভারতীয় ধূসর নেকড়েদের বসবাস। কিন্তু মানুষের সঙ্গে সঙ্ঘাত আর বসতি ধ্বংসের কারণে তাদের বিচরণক্ষেত্র সীমাবদ্ধ হয়ে গিয়েছে বাংলার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ছোট ছোট কয়েকটি অঞ্চলে। আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন-এর লাল তালিকায় থাকা সেই ভারতীয় ধূসর নেকড়েদের এমনই একটি আবাসভূমি শিল্পনগরী দুর্গাপুরের অদূরের বনাঞ্চল। তাদের আনুমানিক সংখ্যা নির্ধারণ এবং বিচরণক্ষেত্র, খাদ্যাভ্যাস-সহ বাস্তুতন্ত্র বিষয়ক প্রাথমিক সমীক্ষার কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে উইংস-এর সদস্যদের সহযোগিতায়। ওই এলাকায় গ্রামবাসীদের সঙ্গে নেকড়েদের সঙ্ঘাত প্রশমনের কাজেও বন দফতর এবং ভারতীয় প্রাণী সর্বেক্ষণ (জেডএসআই)-এর বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কাজ করছেন সংগঠনের সদস্যেরা।