প্রতীকী ছবি।
বেশ কয়েক বছর আগে মৃত্যু হয়েছে বোনের। অথচ, সেই বোনের নামেই এক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পে আউশগ্রামের দ্বারিয়াপুর গ্রামে না কি বাড়ি তৈরি হয়েছে! এমনই দাবি করে, কী ভাবে এমনটা ঘটল তা জানতে চেয়ে বিডিও (আউশগ্রাম ১)-কে সপ্তাহখানেক আগে চিঠি দিয়েছেন মৃতার দাদা।
ওই গ্রামেরই বাসিন্দা কেনারাম বাগদি। বিডিও (আউশগ্রাম ১) চিত্তজিৎ বসুর কাছে চিঠি দিয়ে তিনি জানান, তাঁর বোন ভাগ্যমণি বাগদির মৃত্যু হয়েছে সাত-আট বছর আগে। মারা গিয়েছেন ভগ্নিপতিও। চিঠিতে কেনারামবাবু জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত থেকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার যে তালিকা বেরিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ৮৪ নম্বরে তাঁর বোন ভাগ্যমণির নাম রয়েছে (আইডি নম্বর: ডব্লিউবি ০২০০৯/২/৩৪১)। এমনকি, ওই বাড়ি তৈরির জন্য উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে দফায় দফায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকাও দেওয়া হয়েছে। তাঁর দাবি, প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি প্রকল্পের ওই বাড়ি ২০১৮-র ১৪ জুন তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিডিও-র কাছে কেনারামবাবুর প্রশ্ন, ‘‘কী ভাবে বোনের নাম এই প্রকল্পে উঠল? বাড়িই বা কী ভাবে তৈরি হল? আর বাড়ি তৈরি হলে তা কি আকাশে হয়েছে!’’
মহকুমাশাসক (বর্ধমান উত্তর) পুষ্পেন্দু সরকার অবশ্য বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে স্থানীয় দিগনগর ২ পঞ্চায়েতের প্রধান সরস্বতী মুর্মুর দাবি, ‘‘আমি এমন কোনও ঘটনার কথা জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’’
এর আগে দিগনগরের দু’টি পঞ্চায়েতেই সরকারি প্রকল্পের ঘর তৈরি নিয়ে শাসক দলের নেতাদের একাংশ ‘কাটমানি’ নিয়েছেন, এমন অভিযোগ করেছিলেন উপভোক্তারা। তৃণমূল সূত্রের খবর, বিষয়টির সামাল দিতে আউশগ্রামের দলের পর্যবেক্ষক তথা তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকেও মাঠে নামতে হয়। বেশ কয়েক জন তৃণমূল নেতার নামে অভিযোগও হয়। পরে বীরভূমের এক নেতার মধ্যস্থতায় তৃণমূলের নেতারা টাকা ফেরান বলে জানা যায়। এমনকি, দ্বারিয়াপুর গ্রামেই টিপ সই ‘জাল’ করে রানি হাঁসদা নামে এক মহিলার টাকা তুলে নেওয়ারও অভিযোগ ওঠে।
কেনারামবাবু চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, ‘‘শুধুমাত্র পঞ্চায়েতের পক্ষে এই দুর্নীতি করা সম্ভব নয়। ব্লক প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দফতরও এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।’’ বিডিও (আউশগ্রাম ১) চিত্তজিৎ বসু বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত স্তরের কমিটিকে ঘটনার তদন্তের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্তা, গুসকরার বাসিন্দা তপন মাজি বলেন, “এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বারবার একই ঘটনা ঘটছে। আমার ধারণা, যেখানে মৃত মহিলার নামে বাড়ি হয়ে যাচ্ছে, সেখানে এ রকম ভাগ্যমণির খোঁজ অনেক মিলবে।’’