আসানসোল বাজারের ইঁদারা।—নিজস্ব চিত্র।
কেউ বলেন, শের শাহের আমলে তৈরি। কারও আবার দাবি, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে। আসানসোল বাজার এলাকায় তিনটি ইঁদারা কবে তৈরি, সে নিয়ে জল্পনার শেষ নেই। সেগুলি সত্যি কবে তৈরি হয়েছিল, তার কোনও তথ্যপ্রমাণও কারও কাছে মেলেনি। তবে প্রাচীন এই ইঁদারাগুলির প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই শহরের অনেকেরই। কারণ, চড়া গরমেও জল মেলে সেগুলি থেকে। কিন্তু সেগুলি সংস্কারের ব্যাপারে কখনও কোনও তরফে উদ্যোগ হয়নি বলে অভিযোগ তাঁদের।
আসানসোলের বাজার লাগোয়া জিটি রোডের পাশে প্রায় ১৫ মিটার অন্তর বিশাল আকারের এই ইঁদারা তিনটি রয়েছে। সেগুলি কবে তৈরি হয়েছে, সে নিয়ে শহরবাসীর আগ্রহের শেষ নেই। গ্রীষ্মে যখন শহর ও লাগোয়া এলাকায় নানা কুয়ো-পুকুর ফুটিফাটা হয়ে পড়ে, পুরসভা বা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জল সরবরাহ কমে যায়, এই ইঁদারার উপরে ভরসা করেন বহু বাসিন্দা। এ বার গরমেও তার অন্যথা হয়নি।
আসানসোলে কয়েকটি ওয়ার্ড ছাড়া বেশির ভাগ এলাকাতেই পুরসভার নতুন প্রকল্প থেকে জল সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ। জলের সঙ্কটও মিটেছে বলে দাবি তাঁদের। যদিও শহরের বিভিন্ন এলাকায় তীব্র জলের সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। প্রায় দিনই নানা এলাকার মানুষজন পুরসভায় গিয়ে জল সঙ্কটের প্রতিকার চেয়েছেন। সব ক্ষেত্রেই যে সমস্যা মিটেছে, তা নয়। অগত্যা শহরবাসীকে প্রতি দিন গাঁটের কড়ি খরচ করে জল কিনে সমস্যা মেটাতে হচ্ছে। আসানসোল পুরসভার ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুব্রত সিংহ বলেন, ‘‘প্রতি দিন দু’বালতি জলের জন্য কলের তলায় হা-পিত্যেস করে থাকতে হচ্ছে। সারা দিনের কাজের শেষে সম্ভব নয়। তাই মাসে সাতশো টাকা দিয়ে জল কিনে খাচ্ছি।’’ আবার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তপন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের কলে কালো নোংরা জল আসছে। খাওয়া যাচ্ছে না। কোথা থেকে ভাল জল পাব জানি না। তাই জল কিনে খেতে হচ্ছে।’’
শহরের আরও কিছু এলাকাতেও পানীয় জলের তীব্র সমস্যা রয়েছে। সব অঞ্চলে সম্ভব না হলেও কিছু জায়গার মানুষজন এই তিনটি ইঁদারার জল নিয়ে যাচ্ছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা ক্রমাগত জল তোলা হচ্ছে। এখান থেকে জল তুলে ঠেলায় চাপিয়ে বা কাঁধে বয়ে নিয়ে গিয়ে বাড়ি-বাড়ি সরবরাহও করছেন অনেকে। এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা মণীশ শর্মার দাবি, বহু বছর ধরে এ ভাবে ইঁদারাগুলি থেকে জল তোলা হচ্ছে। কখনও সেখানে পুরোপুরি জল শুকিয়ে যেতে দেখেননি তাঁরা। প্রায় ২০ ফুট ব্যস ও দেড়শো ফুট গভীর ইঁদারাগুলির অর্ধেক অংশই জলে ভরে থাকে। উতিম যাদব নামে এক জন বলেন, ‘‘আমরা বংশ পরম্পরায় বাড়ি-বাড়ি জল সরবরাহের ব্যবসা করছি। তবে পুরসভাকে কখনও এর জন্য কর দিতে হয় না।’’ কংগ্রেস যাদব এরকমই আর এক জনের বক্তব্য, ‘‘গরমে ব্যবসা ভাল চলে। আগে কাঁধে করে জল বইতাম। এখন চাহিদা বাড়ায় ঠেলায় চাপিয়ে সরবরাহ করি।’’
গরমে যে ইঁদারাগুলি বড় ভরসা, সেগুলির সংস্কারের অভাব নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় বাসিন্দা শঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘পুরসভার তরফে এগুলির কোনও সংস্কার করা হয় না। বাজার ও আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা নিজেদের খরচে পরিচ্ছন্ন রাখেন।’’ তাঁদের দাবি, শহরের এই জলের উৎস নিয়মিত পরিচর্যা করা হোক।
আসানসোল পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের সদস্য তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘ওই ইঁদারাগুলি সত্যিই এলাকার বাসিন্দাদের প্রয়োজন মেটাচ্ছে। গত বছর একটির সংস্কার হয়েছে। বাকিগুলিও করার পরিকল্পনা আছে।’’