ছড়ানো হচ্ছে ওষুধ। নিজস্ব চিত্র
শহরাঞ্চলে কয়েকজন ডেঙ্গি আক্রান্তের সন্ধান মেলার পরে নড়ে বসল পুরসভা। এলাকা সাফাই, সচেতনতা অভিযান, বাড়ি-বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেওয়া শুরু হয়েছে পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলে। পুরসভার কর্মী-আধিকারিকদের অভিযোগ, সব ক্ষেত্রে বাসিন্দারা ঠিকমতো সহযোগিতা করছেন না। ফলে, কাজে সমস্যা হচ্ছে। দুর্গাপুরে অবশ্য আপাতত ডেঙ্গির বিশেষ প্রকোপ নেই বলে দাবি পুরসভার।
সম্প্রতি আসানসোল পুরসভার ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে একই পরিবারের দুই শিশুর ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার খবর মেলে। তাদের আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন পরিজনেরা। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই শিশু আপাতত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। পুরসভার একটি সূত্রে জানা যায়, শুধু ওই দুই শিশু নয়, আসানসোলের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ৭৪ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন এ বছর। ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনার পরেও এলাকায় সে ভাবে জঞ্জাল সাফাই হয়নি।
পুরসভার অবশ্য দাবি, খবর পাওয়ার পরেই কাজে নামা হয়েছে। আবর্জনা সাফাইয়ের পাশাপাশি, বাড়ি-বাড়ি গিয়ে সচেতন করার কাজ হচ্ছে। এলাকায় কীটনাশক ও মশা মারার ধোঁয়াও দেওয়া হচ্ছে। আসানসোল পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিক দীপক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কর্মী-আধিকারিকেরা সচেতনতা প্রচারে নেমেছেন। মশারি ব্যবহার, জল জমতে না দেওয়া, কুয়োর মুখে মশারির জাল লাগাতে বলা হচ্ছে। বাড়ির আশপাশে নোংরা জমতে না দেওয়া নিয়েও সচেতন করা হচ্ছে।’’
দীপকবাবু অভিযোগ করেন, অনেক ক্ষেত্রে বাসিন্দারা ঠিকমতো সহযোগিতা করছেন না। তিনি জানান, সাধারণত ফুলের টব ও পরিত্যক্ত পাত্রে জল জমিয়ে রাখার প্রবণতা রয়েছে অনেক বাসিন্দার। তা রুখতে স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই কাজ করতে গিয়ে বাধা পাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। বাসিন্দাদের অনেকে তাঁদের পরামর্শ মানতে চাইছেন না বলে অভিযোগ। দীপকবাবু বলেন, ‘‘শহরবাসীর স্বার্থেই স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে সহযোগিতা করার আবেদন জানানো হচ্ছে।’’
গত কয়েক বছর ধরে দুর্গাপুরে বারবার ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। গত জুলাইয়ে বিধাননগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় পানাগড় গ্রামের এক বধূর। তাঁর রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু ধরা পড়েছিল বলে হাসপাতালের রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে ইদানীং ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে রোগী ভর্তির সংখ্যা ইদানীং বেশ কম বলে জানান দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার দেবব্রত দাস। তিনি বলেন, ‘‘অগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা বেশি ছিল। তুলনায় এখন খুব কম।’’
তবে মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ডেঙ্গি না হলেও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন অনেকে। পুরসভার দাবি, মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে বর্ষার আগে শহরের সব ওয়ার্ডে মশা মারার তেল ‘স্প্রে’ করা হয়েছে। গাপ্পি মাছ ছাড়া হয়েছে জলাশয়ে, নর্দমায়। তাতে পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে বলে মনে করছেন পুর-কর্তারা।