নির্মল অভিযান চায় দুই শহরও

এলাকা করে তুলতে হবে ‘নির্মল’— অভিযান শুরু হয়েছে সেই লক্ষে। ভোরে রেললাইনের আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকছেন প্রশাসনের কর্তারা। সকালে বাঁশবাগানে হাজির হচ্ছেন মন্ত্রী।

Advertisement

সুব্রত সীট ও সুশান্ত বণিক

দুর্গাপুর ও আসানসোল শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৬ ০১:৩০
Share:

খালের পাড়ে কাপড়ে ঘেরা শৌচাগার। আবর্জনা পড়ে দূষিত হয় জল। ছবি: বিশ্বনাথ মশান।

এলাকা করে তুলতে হবে ‘নির্মল’— অভিযান শুরু হয়েছে সেই লক্ষে। ভোরে রেললাইনের আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকছেন প্রশাসনের কর্তারা। সকালে বাঁশবাগানে হাজির হচ্ছেন মন্ত্রী। জেলার নানা প্রান্তে প্রায় দিনই দেখা যাচ্ছে এমন নানা দৃশ্য। কিন্তু স্মার্ট সিটির দৌড়ে থাকা বা দেশের অন্যতম অপরিচ্ছন্ন শহরের তকমা ঘোচাতে মরিয়া দুই শহরে সেই উদ্যোগ চোখে পড়ছে না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। আসানসোল ও দুর্গাপুরে ‘নির্মল বাংলা’ অভিযান কবে শুরু হবে, প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্মল মহকুমা হিসেবে দুর্গাপুরকে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। স্মার্ট সিটি হওয়ার লড়াইয়েও রয়েছে এই শহর। কিন্তু প্রদীপের নীচেই যেন অন্ধকার। পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে বেশ কয়েকটি জায়গায় সব বাসিন্দার বাড়িতে শৌচাগার নেই। সমস্যা মেটাতে সরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে একশোর বেশি কমিউনিটি শৌচাগার। কিন্তু সেগুলির অনেক ক’টিই এখন ব্যবহারের অযোগ্য। কোথাও দরজা-জানালা ভাঙা, আবার কোথাও জল মেলে না। ফলে, এই সব এলাকার অনেককেই শৌচকর্ম করতে মাঠে যেতে হয়। শৌচাগার ব্যবহারে উপযুক্ত সচেতনতা গড়ে তুলতে না পারলে সমস্যা মিটবে না বলে মনে করেন আশপাশের বাসিন্দারা। পুরসভার ডেপুটি মেয়র অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্বাস, বেহাল শৌচাগার সংস্কারের পাশাপাশি সচেতনতা গড়ে তোলা হবে।

দুর্গাপুরের বেশ কিছু এলাকায় এখনও রয়ে গিয়েছে অস্বাস্থ্যকর ও অবৈজ্ঞানিক উপায়ে তৈরি শৌচাগার। আশিসনগর এলাকায় দামোদরের ক্যানালের দুই পাড়ে এখনও ছেঁড়া ত্রিপল বা বস্তা দিয়ে ঘেরা এই সব শৌচাগার দেখা যায়। সেখান থেকে পাইপ বেয়ে মলমূত্র সোজা গিয়ে পড়ে ক্যানালের জলে। কোথাও আবার পাইপ এত ছোট যে আবর্জনা জল পর্যন্ত পৌঁছয় না। পাড়েই জমে দূষণ তৈরি করে এলাকায়। ডিপিএল হাসপাতালের পিছন দিকে ক্ষুদিরামপল্লি এলাকায় বা ক্যানালের একটি সেতু পেরিয়ে আশিসনগরে ঢোকার আগে বেলতলায় বেশ এমন কিছু খাটা পায়খানা রয়েছে। আশপাশের বাসিন্দাদের দাবি, শৌচাগার গড়ার খরচ জোগাড় করতে না পেরে এই পদ্ধতি নিতে হয়েছে।

Advertisement

আসানসোল মহকুমার চারটি পঞ্চায়েত এলাকাকে ‘নির্মল’ করে তুলতে অভিযান শুরু হয়েছে। জেলাশাসক থেকে জেলা সভাধিপতি, মহকুমাশাসক থেকে বিডিও সকলেই নিয়ম করে কাকভোরে মাঠে হানা দিচ্ছেন। ঘটি বা গাড়ু হাতে কাউকে দেখলেই পথ আটকাচ্ছেন। কিন্তু শহরাঞ্চলে নানা জায়গায় এখনও অবাধে যত্রতত্র শৌচকর্ম সারছেন বাসিন্দারা।

আসানসোল পুর এলাকার বিভিন্ন জায়গাতেও অবৈজ্ঞানিক শৌচাগারের সমস্যা রয়েছে। শহরের মাঝেই এই রকম শৌচাগার দেখা যায়। সম্প্রতি বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুর কর্তৃপক্ষ দেখেছেন, আসানসোলের রবীন্দ্র ভবন লাগোয়া রেললাইন লাগোয়া অঞ্চল, ডিপোপাড়া, রেলপাড়, শান্তিনগর, নরসিংহবাঁধ, চেলিডাঙা, কুলটির নিয়ামতপুর, বরাকর, দক্ষিণ রানিতলা, চিনাকুড়ি এলাকায় এই ধরনে অবৈজ্ঞনিক শৌচাগার রয়েছে। পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, কুলটি আসানসোল মিলিয়ে প্রায় সাতশো এই রকম শৌচাগার রয়েছে। তবে শহরবাসীর একাংশের দাবি, এই সংখ্যাটা তিন হাজারের কম নয়।

আসানসোল পুর এলাকায় দু’নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া সুইডি গ্রামের আশপাশের ফাঁকা মাঠে, বার্নপুরে দামোদরের পাড়ে, নরসিংহবাঁধ, ইস্কো কারখানার পাঁচিল লাগোয়া জঙ্গলে, কুলটির গল্‌ফ মাঠ, কলেজ রোড, নিউ রোড, আসানসোলের বিএনআর ব্রিজ লাগোয়া রেললাইনের পাশে সকাল-সন্ধ্যায় খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করতে দেখা যায় অনেককেই। দূষণে জেরবার হতে হয় বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুর পুর এলাকায় নির্মল বাংলা অভিযানে গতি আনতে ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে একদফা বৈঠক হয়েছে পুর কর্তৃপক্ষের। আসানসোলের মহকুমাশাসক প্রলয় রায়চৌধুরীও বলেন, ‘‘জেলাশাসকের সঙ্গে মেয়রের বৈঠক হয়েছে। শীঘ্রই অভিযান শুরু হবে।’’ মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি জানান, শহরের কিছু অবৈজ্ঞানিক শৌচাগার ইতিমধ্যে ভাঙা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘উপযুক্ত শৌচাগার তৈরিতে জোর দেওয়া হয়েছে। সে কাজ শুরুও হয়েছে। খোলাস্থানেও শৌচকর্ম বন্ধে অভিযান হবে।’’ তাঁর দাবি, বিধিসম্মত শৌচাগার নির্মাণের যে অনুদান কেন্দ্রের পাঠানোর কথা, তা বন্ধ করা হয়েছে। পুর কর্তৃপক্ষ তা চেয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement