টোটো চালাচ্ছে কুমকুম। নিজস্ব চিত্র।
পায়ে চোট লেগেছে আসানসোলের চন্দন মালির। টোটো চালিয়ে রোজগার করতে পারছেন না তিনি। সংসার চালাতে পড়াশোনার পাশাপাশিই টোটো চালাচ্ছে চন্দনের মেয়ে কুমকুম মালি। সে দশম শ্রেণির ছাত্রী। সামনের বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। দিনে টোটো চালিয়ে জীবনের প্রথম ‘বড় পরীক্ষার’ প্রস্তুতি নিচ্ছে সে।
চন্দনের পাঁচ মেয়ে। দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। মেয়েদের পড়াশোনা এবং সংসারের খরচ টোটো চালিয়েই রোজগার করেন চন্দন। তাঁর পায়ে চোট লেগেছে। চিকিৎসার খরচও রয়েছে। বাধ্য হয়ে টোটো চালকের আসনে বসে সংসারের রোজগারের দায়িত্ব তুলে নিয়েছে কুমকুম। আসানসোলের কাল্লা দুই নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে কাল্লা দোমোহানি রোডের বাড়ি থেকে ডিপু পাড়া, আরাডাঙা হয়ে স্টেশন, বাসস্ট্যান্ডে টোটো চালিয়ে বেড়াচ্ছে সে। সামনের বছর মাধ্যমিক পরীক্ষাও রয়েছে। তাই দিনে টোটো চালিয়ে রাতে পড়াশোনা করছে সে। কোনও কোনও দিন স্কুলেও গিয়েছে প্রোজেক্ট জমা দেওয়া-সহ বিভিন্ন কাজের জন্য।
কিন্তু টোটো চালানো কী ভাবে শিখল কুমকুম? উত্তরে সে বলেছে, "টেকনিক্যাল কিছু বিষয় দেখে নিয়েই টোটো চালানো শিখেছি। প্রতি দিন ৪০০-৫০০ টাকা রোজগার হচ্ছে। তা দিয়ে সংসারের খরচ ও তার বাবার চিকিৎসার কাজও চলছে।’’ একটি মেয়ে পারিবারিক দুঃসময়ে কী ভাবে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে, কুমকুমকে দেখে তার প্রমাণ পেলেন চন্দন। তিনি বলেছেন, তাঁর মেয়েরা কোনও ছেলের থেকেও বেশি কাজের।
কুমকুমের স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি শোনার পর বলেছেন, ‘‘ওর পড়াশোনার যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, তা আমরা দেখব। সকলে মিলে ওর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব।’’ পাশাপাশি কুমকুমের এই লড়াইকেও কুর্ণিশ জানিয়েছেন তিনি।