আসানসোল জেলা হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারের ভবন। নিজস্ব চিত্র।
আলাদা করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ট্রমা সেন্টার তৈরির সিদ্ধান্ত বাতিল হল। বদলে, হাসপাতালের সাধারণ অস্ত্রোপচার বিভাগে আলাদা করে ট্রমা রোগীদের জন্য কিছু শয্যা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সম্প্রতি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে বলে খবর। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) শেখ মহম্মদ ইউনুস বলেন, “ট্রমা সেন্টারের জন্য নতুন করে আলাদা পরিকাঠামো ও চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী পাওয়া যাবে না বলে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।” বিষয়টি সামনে আসার পরেই সরকারের তীব্র সমালোচনা করছেন বিরোধী নেতৃত্ব।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোলে ২০০৯-এ একটি ট্রমা কেয়ার ইউনিট তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। রাজ্যের বাম সরকার কেন্দ্রটি তৈরির জন্য প্রায় ন’কোটি টাকা অনুমোদন করে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, শিল্পাঞ্চলে একাধিক সরকারি ও বেসরকারি কারখানা, খনি রয়েছে। শিল্পাঞ্চলের উপর দিয়ে গিয়েছে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক। ফলে, শিল্প দুর্ঘটনায় জখম শ্রমিক ও সড়ক দুর্ঘটনায় জখমদের দ্রুত উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা দিতে ট্রমা কেয়ার ইউনিট তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। এই পরিকল্পনা কার্যকর করতে জেলা হাসপাতালের পূর্ব দিকে একটি ভবনও তৈরি করা হয়। সেখানে অস্থি বিভাগে পৃথক কয়েকটি ওয়ার্ড তৈরি, দশ শয্যার একটি ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট, লাইফ সাপোর্টের মতো অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ ওয়ার্ড ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
কিন্তু রাজ্য সরকার এই ট্রমা কেয়ার ইউনিট তৈরির সিদ্ধান্ত বাতিল করায় সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। যদিও, সিএমওএইচ জানিয়েছেন, জেলা হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডের অস্থি বিভাগে ট্রমা রোগীদের জন্য পাঁচটি শয্যা নির্দিষ্ট করে রাখা হবে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত রোগীরা এলে তাঁদের ওই শয্যায় ভর্তি করানো হবে। হাসপাতালের অস্থি বিশেষজ্ঞেরা তাঁদের উপযুক্ত চিকিৎসা দেবেন।
পাশাপাশি, জেলা হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাস জানান, আসানসোলে একটি দ্বিতীয় স্তরের ট্রমা কেয়ার ইউনিট বানানোর পরিকল্পনা হয়েছিল। এখন সেখানে তৃতীয় স্তরের ট্রমা কেয়ারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তাই ট্রমা রোগীদের জন্য আলাদা বিভাগ না বানিয়ে তাঁদের সাধারণ বিভাগে রেখে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হবে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে রাজ্যে দু’টি দ্বিতীয় স্তরের ট্রমা কেয়ার ইউনিট আছে— একটি কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এবং অন্যটি উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর হাসপাতালে। তৃতীয়টি হওয়ার কথা ছিল আসানসোলে।
সরকারের এই সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “শিল্পাঞ্চলের প্রয়োজনীয়তা ভেবেই বাম সরকার আসানসোলে পৃথক ট্রমা কেয়ার ইউনিট তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু বর্তমান তৃণমূল সরকার তা বাতিল করে ফের আসানসোলকে বঞ্চিত করল।” বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক এবং আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, “তৃণমূল সরকারের মানুষের পাশে থাকার বার্তা আদতে যে কথার কথা, সেটা আবার প্রমাণিত হল আসানসোলে পৃথক ট্রমা কেয়ার ইউনিট তৈরির সিদ্ধান্ত বাতিলের ঘোষণায়। বিধানসভায় বিষয়টি নিয়ে সরব হব।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, “বিরোধীরা কিছু না বুঝে কথা বলছেন। ট্রমা সেন্টারের যাবতীয় পরিষেবা জেলা হাসপাতালে মিলবে।”