অর্ণব দাম। —ফাইল চিত্র।
সংশোধনাগারে বন্দি অবস্থায় ইতিহাস বিষয়ে গবেষণার সুযোগ পেয়েছেন মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন বলে সেখানকারই সংশোধনাগারে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু পড়াশোনার সে ভাবে সুযোগ পাচ্ছেন না অর্ণব ওরফে বিক্রম। এমনকি, তাঁর সঙ্গে আরও দুই রাজনৈতিক বন্দি ধৃতিরঞ্জন মাহাতো এবং চুনারাম বাস্কে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার পাচ্ছেন না। এমনই অভিযোগ করল মানবাধিকার সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অফ ডেমোক্রেটিক রাইটস্ বা এপিডিআর।
শনিবার এপিডিআরের তিন প্রতিনিধি বর্ধমান কেন্দ্রীয় জেলা সংশোধনাগারে যান। জেলের ভিতরকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে বেশ কিছু অভিযোগ করেছেন তাঁরা। মানবাধিকার সংগঠনের তরফে জয়শ্রী পালের দাবি, বন্দিরা প্যারোল পাচ্ছেন না। সংশোধনাগারে তাঁদের খাবারও ঠিকঠাক দেওয়া হচ্ছে না। জয়শ্রীর কথায়, ‘‘খাবারে পুষ্টির অভাব রয়েছে। ওঁদের পাতে ডিম দেওয়া হয় না। পরিবর্তে ডাল দেওয়া হয়।’’ জয়শ্রী এ-ও জানান, পড়াশোনার জন্য প্রয়োজনীয় বইপত্র পাচ্ছেন না পিএইচডি পড়ুয়া অর্ণব। কারণ, বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে ঠিকঠাক লাইব্রেরিই নেই।
মাওবাদীদের মূলস্রোতে ফেরাতে উদ্যোগী রাজ্য সরকার। অনেক মাওবাদী নেতা রাজ্য সরকারের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। অর্ণব ওরফে বিক্রম জেলে থেকেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের শিলদায় ইএফআর ক্যাম্পে হামলা চালানোর ঘটনায় মূল অভিযুক্ত অর্ণব বন্দুক, গুলির লড়াই ছেড়ে পড়াশোনায় মন দেন। গরাদের আড়ালে থেকেই স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও ‘সেট’ উত্তীর্ণ হন অর্ণব। ইতিহাসে গবেষণার জন্য গত ২৬ জুন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারভিউ দেন। তাঁর ভর্তি নিয়ে নানা গড়িমসি হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত পিএইচডি করার সুযোগ পেয়েছেন অর্ণব।
কিন্তু সংশোধনাগারে রাজনৈতিক বন্দিরা কী অবস্থায় রয়েছেন, তা চাক্ষুষ করতে গিয়েছিলেন এপিডিআরের জয়শ্রী, কোয়েল গঙ্গোপাধ্যায় এবং দেবাশিস নন্দী। জেল সুপারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মূলত তিনটি দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলেছেন তাঁরা। বন্দিদের পরিস্থিতি সম্পর্কে এপিডিআরের প্রতিনিধিরা বলেন, ‘‘এখানে (বর্ধমান সংশোধনাগারে) তিন রাজনৈতিক বন্দি রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম অর্ণব দাম। তিনি এখান থেকে পড়াশোনা করছেন। আমরা রাজ্যের বিভিন্ন সংশোধনাগার ঘুরে ঘুরে দেখছি, সেখানকার পরিকাঠামো, খাবারের মান, চিকিৎসা ব্যবস্থা। এখানে (সংশোধনাগারে) জায়গার তুলনায় বন্দির সংখ্যা বেশি। গায়ে গায়ে থাকতে হচ্ছে ওঁদের। এতে চর্মরোগ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’’ খাবারের মান নিয়ে বিশেষ জোর দিয়েছেন মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘খাবারের মানও ভাল নয়। ডিমের বদলে প্রতি দিনই ডাল দেওয়া হচ্ছে। প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার কম দেওয়া হয়। সংশোধনাগারে চিকিৎসকেরও অভাব রয়েছে। রাতের দিকে কোনও বন্দি অসুস্থ হয়ে পড়লে তখন কী হবে, এই বিষয়ে জেল সুপারকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি জানান, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনও রাস্তা নেই! তিনি খাবার এবং জায়গার সঙ্কুলান নিয়ে বলেন, ‘এটা উচ্চ আধিকারিকদের ব্যাপার। সব জেলেই আয়তনের তুলনায় বন্দির সংখ্যা বেশি।’’’
উল্লেখ্য, গত জুলাই মাস থেকে বর্ধমান জেলা সংশোধনাগারে রয়েছেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত অর্ণব। তিনি যাতে পিএইচডি করতে পারেন সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। পরে অর্ণবের ভর্তির বিষয়ে জট কাটে। তিনিও রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান। এখন এপিডিআরের অভিযোগ প্রসঙ্গে জেল সুপার পৃথা সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হননি। তবে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সংশোধনাগারের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ওই তিন জনকে রাজনৈতিক বন্দি বলা যায় না। কারণ, তিন জনই ২০১০ সালে শিলদা-কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। যাই হোক, সংশোধনাগারে খাবারদাবার নিয়ে যে অভিযোগ করা হচ্ছে সেটা ঠিক নয়।’’