অরিত্র পাল।
যত অসুবিধাই হোক, স্কুলে যাওয়া চাই। আঁকা, গল্পের বই পড়া থেকে কবাডি খেলা— আগ্রহ রয়েছে অনেক কিছুতেই। সে সবের মধ্যে নিয়ম করে পড়াশোনা, তাতেই ছেলের সাফল্য মিলেছে বলে মনে করছেন মাধ্যমিকে মেধাতালিকায় প্রথম স্থানে থাকা মেমারির অরিত্র পালের বাবা-মা। মেমারির বিদ্যাসাগর মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউট (ইউনিট ১)-এর ছাত্র অরিত্র এ দিন সকালে প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেনি, সে প্রথম হয়েছে। বারবার টিভিতে নাম দেখে বিশ্বাস হয় তার।
অরিত্রর স্কুলের প্রধান শিক্ষক কেশবচন্দ্র ঘোষাল বলেন, ‘‘অরিত্র স্কুলে আসেনি, এমন এক দিনও হয়নি। টেস্ট পরীক্ষার পরেও নিয়মিত ভাবে স্কুলে এসে বিভিন্ন বিষয়ের খাতা জমা দিয়ে যেত সংশোধনের জন্য। পরে আবার নিয়ে যেত।’’ অরিত্র বলে, ‘‘স্কুলে যাব না, এটা আমি ভাবতেই পারি না। স্কুলে যেতে ভাল লাগত। সব শিক্ষকেরা আমাকে নানা ভাবে সাহায্য করেছেন।’’ অরিত্রর মা, প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা চন্দনাদেবী বলেন, ‘‘অরিত্র আগে বর্ধমানের সিএমএস স্কুলে পড়ত। বাজেপ্রতাপপুর থেকে প্রতিদিন বাসে করে স্কুলে যেত। কোনও কারণে বাস না এলে অনেক টাকা দিয়ে রিকশা ভাড়া করে স্কুলে পাঠাতে হত। নিয়মানুবর্তিতার জন্যই সাফল্য এসেছে।’’ যদিও ছেলে প্রথম হবে বলে তিনি ভাবতে পারেননি, জানান অরিত্রের বাবা, পানাগড়ের আর্মি ক্যাম্পে কর্মরত গণেশবাবু। তিনি বলেন, ‘‘আমরা তো ওর নাম দেখে আনন্দে লাফিয়ে উঠেছিলাম।’’
অরিত্র বাংলা ও ভৌতবিজ্ঞানে ৯৮, ইংরেজি ও জীবনবিজ্ঞানে ৯৯ এবং অঙ্ক, ইতিহাস ও ভূগোলে ১০০ করে নম্বর পেয়েছে। তার মা জানান, ইতিহাস, ভূগোল ও বাংলার জন্য ছেলের কোনও গৃহশিক্ষক ছিল না। অরিত্র বলে, ‘‘সিলেবাসের বাইরে অন্তত তিন রকম রেফারেন্স বই পড়তাম। বড় প্রশ্নগুলি নিয়মিত লিখতাম। ছোট প্রশ্ন মনে রাখতে মা সাহায্য করতেন। দিনে ১০-১৬ ঘণ্টা পড়তাম।’’ সে জানায়, ভবিষ্যতে রসায়ন বা অঙ্ক নিয়ে গবেষণা করার ইচ্ছে রয়েছে। তা না হলে চিকিৎসক হওয়ার চেষ্টা করবে।
ক্রিকেটে সচিন তেন্ডুলকর ও বিরাট কোহালির ভক্ত অরিত্র নিজে ভালবাসে কবাডি খেলতে। তার কথায়, ‘‘স্কুলে টিফিনের সময়ে কবাডি খেলতাম।’’ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মা জানান, প্রায়ই জামা ছিঁড়ে বাড়ি ফিরত ছেলে। এ দিন তাকে সংবর্ধনা জানিয়ে মেমারি পুরসভার প্রশাসক স্বপন বিষয়ী বলেন, ‘‘অরিত্রের জন্য মেমারি শিরোনামে। তার সাফল্য আরও অনেককে উৎসাহিত করবে।’’
উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল সম্পর্কিত যাবতীয় আপডেট পেতে রেজিস্টার করুন এখানে |