সাজাপ্রাপ্ত জাহাঙ্গির। নিজস্ব চিত্র
পাঁচ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে পুকুরের জলে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় ফাঁসির সাজা হল এক যুবকের। শুক্রবার বিকেলে কাটোয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক সুকুমার সূত্রধর চার বছর ধরে চলা মামলায় ওই সাজা শোনান। গত ৪০ বছরে কাটোয়া আদালত এই প্রথম ফাঁসির সাজা দিল, দাবি করেছেন আইনজীবীদের একাংশ। নির্যাতিত শিশুর বাবা বলেন, ‘‘বিশ্বাস ছিল, মেয়ের খুনি কড়া সাজা পাবে। মেয়ের মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে।’’
রায় দিতে গিয়ে এ দিন বিচারক বলেন, ‘‘এটি বিরলের থেকে বিরলতম ঘটনা।’’ এর পরেই দোষী জাহাঙ্গির চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আপনাকে আমি মৃত্যুদণ্ড দিলাম।’’ সাজা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন দোষীর পরিজনেরা। সাজাপ্রাপ্তের বাবা চৌধুরী সিরাজ হোসেন দাবি করেন, ‘‘আমার ছেলেকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। ছেলে নির্দোষ। এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হব আমরা।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কেতুগ্রাম থানায় লিখিত অভিযোগ করেন নির্যাতিতা শিশুটির মা। তিনি দাবি করেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ প্রতিবেশী জাহাঙ্গির তাঁর পাঁচ বছরের মেয়েকে চানাচুর কিনে দেওয়ার নাম করে নিয়ে যায়। পাড়ারই একটি দোকান থেকে চানাচুর কিনে দেয়। তার পর থেকে শিশুটির খোঁজ পাওয়া যায়নি। পর দিন, ১৫ ফেব্রুয়ারি গ্রামের একটি পুকুর থেকে ছোট্ট মেয়েটির ক্ষতবিক্ষত দেহ মেলে। জাহাঙ্গিরকে গ্রেফতার করে কেতুগ্রাম থানা। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ওই শিশুটিকে ধর্ষণ করে খুন করে জাহাঙ্গির। তার পরে, প্রমাণ লোপাটের জন্য তার দেহ পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। ঘটনার তিন মাসের মধ্যে ২০১৮ সালে ১১ মে আদালতে চার্জশিট জমা দেন মামলার তদন্তকারী অফিসার৷ ২১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৬ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার জাহাঙ্গিরকে ‘পকসো’ মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে আদালত।
শিশুটির প্রতিবেশীরা জানান, আর পাঁচটা দিনের মতো ওই দিনও বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল একরত্তি মেয়েটি। তার ক্ষতবিক্ষত দেহ দেখে শিউরে উঠেছিল গ্রাম। দোষী গ্রেফতার হওয়ার পরে, শাস্তির আশায় বুক বেঁধেছিলেন সবাই। তাঁরা জানান, দরিদ্র দম্পতির চার মেয়ে। ছোটটি সবে পড়াশোনা শুরু করেছিল। নির্যাতিতার মা বলেন, ‘‘মেয়ে খুবই মিশুকে ছিল। কেউ ডাকলেই চলে যেত। ওই নরপিশাচ মেয়েকে চানাচুরের লোভ দেখিয়ে গ্রামের রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে, ধর্ষণ করে খুন করে। সে দিনের ব্যথা আজও দগদগে হয়ে আছে। খুনির ফাঁসি হলে, আমার মেয়ে শান্তি পাবে।’’
কাটোয়া চাইল্ডলাইনের টিম লিডার সুচেতনা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শিশুদের জীবন নষ্ট করে দেওয়ার মতো জঘন্যতম অপরাধে ফাঁসির সাজা হওয়ায় আমরা খুশি। এই রায়ে মানুষের বিচার ব্যবস্থার প্রতি আরও আস্থা বেড়ে গেল।’’