বাঁ দিকে, এখানেই জল নিতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে যুবতীর। অন্ডালের সিঁদুলি বাউড়িপাড়ায়। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
এলাকায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের (পিএইচই) কল আছে। কিন্তু তাতে জল সরবরাহ অনিয়মিত এবং অপর্যাপ্ত বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে বাসিন্দাদের অনেকেই ‘অনিয়ম’ জেনেও কলের পাশে পাইপলাইন ফুটো করে ছোট পাম্পের সাহায্যে জল টেনে সমস্যা মেটাতে বাধ্য হন। এ ভাবেই জল নিতে গিয়ে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল অপর্ণা বাউড়ি নামে (২৮) নামে এক যুবতীর, জানাচ্ছেন এলাকাবাসী এবং পঞ্চায়েতের কর্তারা। রবিবার রাতে তৃণমূল পরিচালিত খান্দরা পঞ্চায়েতের সিঁদুলিবাউড়িপাড়ার ঘটনা।
স্থানীয় সূত্রে অভিযোগ, নিচু বাউড়িপাড়ায় দু’টি কল আছে। কিন্তু তাতে সপ্তাহে তিন দিনের বেশি জল আসে না। এ ছাড়া, যে তিন দিন জল আসে, সে দিনগুলিতেও অত্যন্ত ধীরে জল পড়ে। এই পরিস্থিতিতে কিছু দিন আগে এলাকাবাসীর একাংশ এক জোট হয়ে একটি ছোট পাম্প কেনেন। সেটির সাহায্যে জল টেনে সমস্যা মেটাতেন তাঁরা। পুলিশ জানিয়েছে, এলাকাবাসীর সূত্রে তারা জানতে পেরেছে, রবিবার রাত ৮টা নাগাদ অপর্ণা জল নিয়ে পাম্পটির বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করতে যান। সে সময়েই তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। তাঁকে প্রথমে খান্দরা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয় বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। পুলিশ জানায়, একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ দিকে, ঘটনার পরেই এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ। স্থানীয় বাসিন্দা সুশান্ত বাউড়ির বক্তব্য, “জলকষ্ট থেকে বাঁচতে আমরা বাধ্য হয়ে পাইপলাইনে ফুটো করে পাম্প লাগিয়ে জল টেনে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছিলাম। তার এমন পরিণতি হবে, ভাবতে পারিনি।” সন্তোষ নামে এক জনের বক্তব্য, “পাড়াশুদ্ধ লোকের ভুলের শিকার হল মেয়েটা।” মৃতার বাবা বাবুলাল বাউড়ি বলেন, “কী করব, এত জল-সঙ্কট এলাকায়। এ ভাবে জল নেওয়াটাই কাল হল।” কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে ছিলেন না অপর্ণার মা জ্যোৎস্না।
এলাকার জল-সঙ্কটের জন্য সরাসরি পিএইচই-র দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলছে পঞ্চায়েত। তৃণমূল পরিচালিত খান্দরা পঞ্চায়েতের প্রধান শ্যামলেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, “জলের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের। আমাদের পঞ্চায়েত এলাকার ২২টি সংসদের অর্ধেকের বেশি এলাকায় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করেনি ওই দফতর। বার বার আমরা আবেদন জানিয়েছি। লাভ হয়নি।” তাঁর সংযোজন: “এই পরিস্থিতিতে অবৈধ ভাবে পাম্পের সাহায্যে জল টানতে গিয়ে এক যুবতীকে প্রাণ দিতে হল। আমরাও মানুষকে সচেতন করতে পারিনি।”
যদিও, দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত রায়ের অভিযোগ, সিঁদুলি, বহুলা-সহ বিস্তীর্ণ খনি এলাকায় এ ভাবে অনেকেই পাম্পের সাহায্যে জল টেনে নিচ্ছেন। কিছু জায়গায় পুলিশ এবং প্রশাসনের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বাসিন্দাদের বিষয়টি নিয়ে সচেতন করেছে দফতর। কিছু জায়গায় অবৈধ সংযোগ ছিন্ন করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও লাভ হয়নি বলেই দাবি সুব্রতের। পাশাপাশি, তাঁর দাবি, “সিঁদুলিতে মৃত্যুর খবর আমাদের কেউ জানাননি।”