Durgapur

‘সুপারি দিয়ে খুন’, গ্রেফতার মা-দাদা

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, স্বরূপের কিছু ‘মানসিক সমস্যা’ থাকায় তাঁর জন্য সম্পত্তি বেহাত হতে পারে বলে মা ও দাদা উদ্বিগ্ন ছিলেন। এই পরিস্থিতিতেই করা হয় খুনের পরিকল্পনা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২০ ০২:৩৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

এক যুবককে খুনের অভিযোগে মঙ্গলবার তাঁর মা, দাদা ও ‘সুপারি কিলার’ সন্দেহে এক জনকে ধরেছে পুলিশ। এর আগেও এক জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পারুলিয়ার ঘটনা। গত ৯ নভেম্বর প্রতাপপুর পঞ্চায়েতের পিছন থেকে উদ্ধার হয় স্বরূপ সৌ (৩৩) নামে ওই যুবকের দেহ। ধৃতেরা স্বরূপের মা, সুলোচনাদেবী, দাদা অরূপ সৌ ও কালীগনরের বাসিন্দা ‘সুপারি কিলার’ ইব্রাহিম শেখ।

Advertisement

আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্ত বলেন, ‘‘তদন্তে নেমে সম্প্রতি সুদয় মহান্ত নামে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাকে জেরা করেই নিহত যুবকের মা, দাদা ও ইব্রাহিমের সঙ্গে ঘটনার যোগ পাওয়া গিয়েছে। নিহতের মা ও দাদার ব্যাঙ্কের পাশবই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।’’ পুলিশের দাবি, এই সুদয়কেই খুনের ‘কনট্র্যাক্ট’ দেওয়া হয়েছিল। সে ইব্রাহিমকে খুনের ‘সুপারি’ দেয়।

দেহ উদ্ধারের পরে পরিবার দাবি করে, মাঝেমধ্যেই বেপাত্তা হয়ে যেতেন স্বরূপ। ৮ নভেম্বর বিকেল থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। রাতে বাড়ি ফেরেননি। পরে ফিরবেন ভেবে তাঁরা থানায় নিখোঁজ ডায়েরিও করেননি। নিহতের মা সুলোচনাদেবী ও দাদা অরূপ দাবি করেন, স্বরূপের মানসিক সমস্যা ছিল। কিন্তু তাঁদের খুনের অভিযোগ দায়ের করতে বললে তাঁরা তা করতে চাননি বলে দাবি পুলিশের। এর পরেই পুলিশের ‘সন্দেহ’ হয়। এ দিকে, খুনের অভিযোগ করেন নিহতের কাকা।

Advertisement

কিন্তু কেন এই ঘটনা? তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, স্বরূপের কিছু ‘মানসিক সমস্যা’ থাকায় তাঁর জন্য সম্পত্তি বেহাত হতে পারে বলে মা ও দাদা উদ্বিগ্ন ছিলেন। এই পরিস্থিতিতেই করা হয় খুনের পরিকল্পনা। নিহত স্বরূপ ও তাঁর দাদা অরূপের বন্ধু ছিল স্থানীয় বাসিন্দা সুদয়।

পুলিশের দাবি, স্বরূপকে খুন করার জন্য সুদয়ের সঙ্গে অরূপ ও সুলোচনাদেবীর দু’লক্ষ টাকায় ‘রফা’ হয়। এক লক্ষ টাকা দিয়ে সুদয় খুনের ‘সুপারি’ দেন ইব্রাহিমকে। তদন্তকারীদের দাবি, স্বরূপের মোবাইল ঘেঁটে জানা যায়, ৮ নভেম্বর ঘটনার দিন রাতে তাঁকে সুদয় ডেকে পাঠান। মদ খাইয়ে ইব্রাহিমকে খবর দেন সুদয়। ইব্রাহিম আরও দু’জনকে নিয়ে চলে আসেন। তাঁরা গলা টিপে স্বরূপকে খুন করেন বলে অভিযোগ। ইব্রাহিমের সঙ্গী দু’জনের খোঁজ করছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে অতীতে অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। তদন্তে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, খুনের দিন দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন অরূপ। পরের দিন ফোনে সুদয়ের কাছে খবর নিয়ে তার পরে তিনি বাড়ি ফেরেন।

এ দিকে, স্বরূপ এলাকায় বিজেপি সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ঘটনার পরে বিজেপি দাবি করে, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা রয়েছে ঘটনার পিছনে। অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল দাবি করে, এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। বুধবার তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুজিত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা শুরু থেকেই বলেছিলাম, পারিবারিক ঘটনাকে বিজেপি অহেতুক রাজনীতির রঙ দেওয়ার চেষ্টা করছে।’’ তবে বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীকে খুন করা হল। উল্টে পুলিশ গ্রেফতার করল তাঁর মা ও দাদাকে। চোপড়াতেও দেখেছেন কী হয়েছিল। তৃণমূলকে বাঁচাতে পুলিশ যা নয়, তাই করছে। রাজনৈতিক চক্রান্ত। তাই আমরা এই ঘটনার সিবিআই তদন্ত চেয়েছিলাম।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement