জলের জন্য লাইন। মঙ্গলবার দুর্গাপুরের শ্রীনগরপল্লিতে। ছবি: বিকাশ মশান
সাধারণ অবস্থায় তিন হাজার লিটারের এক ট্যাঙ্কার জলের দর, ছ’-সাতশো টাকা। মঙ্গলবার দুর্গাপুরে দিনভর তা মিলল ১,৫০০ টাকার আশপাশে! ব্যারাজে গেট ভাঙার জেরে এ দিন জলসঙ্কটের পরিস্থিতিতে দুর্গাপুরে এ ভাবে জলকে কেন্দ্র করে কালোবাজারির অভিযোগ উঠল। শহরের নানা প্রান্তের বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাঁদের এলাকায় জল দিতেপারেনি পুরসভা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিপিএল টাউনশিপে, সেপকো টাউনশিপে, বিধাননগর, সুকুমারনগর, সগড়ভাঙা, মহানন্দা কলোনি-সহ শহরের বেশ কিছু জায়গা থেকে জলসঙ্কটের খবর মিলেছে। বহু জায়গাতেই পুরসভার জলের ট্যাঙ্কার পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। বিধাননগরের বাসিন্দা সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, ‘‘বাড়িতে এক ফোঁটা জল পাইনি সারাদিন।’’ এমএএমসি সিডি এলাকার বাসিন্দা সৌরভ রায় বলেন, ‘‘আমাদের পাড়ায় ট্যাঙ্কার পাঠানো হয়নি।’’ ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের হিন্দ কলোনির বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুরসভার পাঠানো জল ঘোলা। খেয়ে পেটের রোগ হওয়ার জোগাড়।
এ দিকে, জলের ট্যাঙ্কার নিয়ে কালোবাজারির অভিযোগ উঠেছে শহরের নানা প্রান্তে। বোতলবন্দি জল নিয়ে অভিযোগ সে ভাবে নেই। বিধাননগরের একটি আবাসনের বাসিন্দা বিনায়ক রায় বলেন, ‘‘এক হাজার টাকা দিয়ে তিন হাজার লিটারের ট্যাঙ্কারের জল কিনতে হয়েছে। অন্য সময়ে আমাদের এখানে ৬০০ টাকায় পাওয়া যায়।’’ সিটি সেন্টার এলাকার বাসিন্দা নয়ন শ্যাম জানান, অন্য সময়ে তাঁদের এলাকায় আটশো টাকায় ট্যাঙ্কার পাওয়া যায়। এ দিন তা মিলেছে ১,৫০০ টাকার আশপাশে। এ ছাড়া, পাঁচ হাজার লিটারের ট্যাঙ্কার অন্য সময়ে ১,২০০-১,৬০০ টাকায় মেলে। এ দিন তা ৩,৭০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকায় মিলেছে বলে অভিযোগ। বেনাচিতি, দুর্গাপুর বাজার-সহ নানা এলাকায় কুড়ি লিটারের জলের জার (সাধারণত দাম, ৬০ টাকা) এ দিন বিক্রি হয়েছে ন্যূনতম ১৭০ টাকায়। বাসিন্দাদের আশঙ্কা, জলের আকাল যত বাড়বে, কালোবাজারিও পাল্লা দিয়ে তত বাড়বে। তবে দুর্গাপুর পুরসভার মেয়র দিলীপ অগস্তি বলেন, ‘‘এক শ্রেণির মানুষ আছেন, যাঁরা সঙ্কটের সময়ে মুনাফা লোটেন। পুলিশকে নজর রাখতে বলছি।’’
পুরসভার ৪৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ডিএসপি টাউনশিপের আটটি বাদে বাকি ৩৫টি ওয়ার্ড জল সরবরাহের বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে প্রশাসন ও পুরসভা জানিয়েছে। ডিএসপি টাউনশিপে আটটি ওয়ার্ডে জল সরবরাহ করার দায়িত্বে রয়েছে ডিএসপি। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত টাউনশিপে পাইপলাইনের মাধ্যেম জল সরবরাহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএসপি-র মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বেদবন্ধু রায়। তিনি জানান, এ ছাড়া, ট্যাঙ্কারের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ফোন করে কেউ জলের সমস্যার কথা জানালে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ট্যাঙ্কার পাঠানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘মঙ্গলবার পর্যন্ত সে ভাবে জলসঙ্কট নজরে আসেনি। কারণ, সোমবার বাসিন্দারা জল মজুত করতে পেরেছেন। বুধবার থেকে চাহিদা বাড়বে। প্রয়োজন অনুযায়ী, ট্যাঙ্কার পাঠানো হবে।’’
এ দিকে, পুরসভার মেয়র পারিষদ (জল) পবিত্র চট্টোপাধ্যায় জানান, পাঁচটি জায়গা থেকে ট্যাঙ্কারে জল ভরে ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে পাঠানো হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর থেকে পাঠানো জলের পাউচ বরো চেয়ারম্যানদের কাছে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা কাউন্সিলরদের মাধ্যমে তা বিলি করার ব্যবস্থা করেছেন। পাশাপাশি, বাঁকুড়া জেলার জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার রাজেশ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তিনটি যন্ত্রে দৈনিক ১ লক্ষ ৮০ হাজার পরিশোধিত জলের পাউচ তৈরি করা হচ্ছে। এই পাউচ দুর্গাপুরেওপাঠানো হচ্ছে।