বাসস্ট্যান্ডের এই সব নির্মাণ ঘিরে উঠেছে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র
যখন আসানসোল শহর জুড়ে সরকারি জমির দখল উচ্ছেদ অভিযান চলছে, ঠিক তখনই বরাকর বাসস্ট্যান্ড-সহ আশপাশের অঞ্চলে সরকারি জমি দখল করে স্থায়ী ও অস্থায়ী নির্মাণ তোলার অভিযোগ সামনে আসছে। বরাকর জুড়েও দ্রুত সরকারি জমির দখল উচ্ছেদের দাবি তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আসানসোল পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, বিষয়টি তাঁদের নজরে এসেছে। ইতিমধ্যে পর্যবেক্ষণের কাজও শুরু হয়েছে বলে মেয়র বিধান উপাধ্যায় জানিয়েছেন।
জানা গিয়েছে, পুরসভা অঞ্চলে প্রথম সরকারি জমির দখল উচ্ছেদ শুরু করা হয়েছিল বরাকর থেকেই। ২০২১-এ পুরসভার কার্যভার প্রশাসনিক বোর্ডের অধীনে থাকাকালীন নভেম্বর মাসে এই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছিল। সে সময় বরাকরবাসীর অভিযোগ ছিল, প্রতি বর্ষায় বরাকরের বেশকিছু এলাকা বৃষ্টির জলে ডুবে থাকে। কিন্তু কেন এই সমস্যা? পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারেরা পর্যবেক্ষণ করে জানতে পারেন, বরাকর স্টেশনরোডের বড় নালা ‘দখল’ করে গজিয়ে উঠেছে বহু স্থায়ী ও অস্থায়ী নির্মাণ। নালা নিয়মিত সাফাই হয় না। বর্ষাকালে নালার জল উপচে এলাকায় ঢুকে যায়। এরই সঙ্গে স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, বরাকর বাসস্ট্যান্ডের জমি দখল করে একাধিক নির্মাণ তোলা হয়েছে। ফলে, সাধারণ বাসযাত্রীরা স্ট্যান্ড ব্যবহার করতে পারছেন না। এমনকি, দূরপাল্লার বাসগুলিও সট্যান্ডে ঢুকতে পারছে না। এর পরে পুর-কর্তৃপক্ষ স্টেশনরোডের বড় নালা ও বাসস্ট্যান্ডের দখল উচ্ছেদ করেছিলেন। স্বস্তি পেয়েছিলেন সাধারণ বাসিন্দারা।
কিন্তু অভিযোগ, গত কয়েক মাস ধরে আবার আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে বরাকর। সম্প্রতি বরাকর বাসস্ট্যান্ডে অবৈধ ভাবে একটি পাকা দোকান তোলা হয়েছে, যাকে কেন্দ্র করে এলাকায় তীব্র উত্তেজনা দেখা গিয়েছে। স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, ওই দোকান থেকে দিনে-দুপুরে মদ বিক্রি করা হয়। ফলে, বহু যাত্রী বাস ধরার জন্য সেখানে দাঁড়াতে পারছেন না। এখানেই শেষ নয়। বাসস্ট্যান্ডে আইএনটিটিইউসি-র একটি অটোচালক ইউনিয়ন অফিসও গড়ে তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ। বাসচালকদের অভিযোগ, বাস দাঁড় করানোর জায়গা দখল করে এ ভাবে অবৈধ নির্মাণ তোলায় যাত্রীরা রাস্তায় দাঁড়াচ্ছেন। ফলে, বাসগুলিও স্ট্যান্ডের পরিবর্তে রাস্তায় দাঁড়াচ্ছে। বাসযাত্রী স্কুলের শিক্ষক অনির্বাণ দত্ত বলেন, “বাসস্ট্যান্ডে খুব অবাঞ্ছিত লোকের ভিড়। তাই রাস্তায় বাস ধরার জন্য অপেক্ষা করি।”
বরাকার স্টেশনরোড, বেগুনিয়া চৌমাথা বাসস্ট্যান্ডের সরকারি জমির এহেন দখলের জন্য ব্যবসা মার খাচ্ছে বলে মনে করছেন বরাকর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়ের উপদেষ্টা দীপক দুধানি। তিনি বলেন, “আানসোলের মতো এই শহরের দখলও উচ্ছেদ করা হোক, আমরা চাই। তবেই সকলে সুন্দর ভাবে ব্যবসা করতে পারবেন।” বরাকরের বস্ত্রব্যবসায়ী রামমোহন ভর বলেন, “প্রয়োজনে আমরা নিজেদের জমির কিছুটা অংশ ছেড়ে দেব। দখল উচ্ছেদ করে বরাকরের সৌন্দর্যায়ন করা হোক। এতে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।”
বরাকর বাসস্ট্যান্ডের জমি দখল করে অবৈধ ভাবে নির্মাণ তোলার অভিযোগ পুরসভায় জমা পড়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র বিধান। তিনি বলেন, “পুরসভা ও পুলিশের উচ্চ পদস্থ অফিসারেরা বাসস্ট্যান্ড-সহ স্টেশনরোড, বেগুনিয়া চৌমাথা এলাকা পর্যবেক্ষণ করেছেন। আসানসোলের মতো বরাকরেও সরকারি জমির দখল উচ্ছেদ করা হবে।”