এমন নানা কারখানার বিরুদ্ধেই এলাকাবাসী দূষণ ছড়ানোর অভিযোগ করেছেন। নিজস্ব চিত্র।
টানা ৭২ ঘণ্টা ধরে দূষণের অভিযোগে বিক্ষোভ চলছে কুলটির পুরাণ্ডি গ্রাম লাগোয়া এলাকায়। এই পরিস্থিতিতে শনিবারও বন্ধ ছিল গ্রাম লাগোয়া বেসরকারি ইস্পাত কারখানার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। বিক্ষোভকে সমর্থন জানিয়েছেন কুলটির বিজেপি বিধায়ক অজয় পোদ্দার। কিন্তু এমন অভিযোগের পরে, প্রশ্ন উঠছে, কেন হচ্ছে দূষণ। এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, কারখানাটি তৈরির পরে, প্রথম দিকে দূষণ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র চালু ছিল। কিন্তু গত কয়েকবছর ওই যন্ত্রগুলি কাজ করে না। ফলে, দূষণের সমস্যা বাড়ছে। পাশাপাশি, রাস্তায় জল না ছেটানো হওয়ার কারণেও সমস্যা বেড়েছে।
এ দিন ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গিয়েছে, বাসিন্দারা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে গ্রামের রাস্তায় বসে রয়েছেন। প্রবীণ বাসিন্দা মাদলি কিস্কু বলেন, ‘‘কারখানার জন্য দূষণ হচ্ছে। শিশু ও বয়স্কেরা শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। চোখ জ্বালা করে সব সময়।’’ দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী শিবানি মুর্মু বলেন, ‘‘চার দিক এমন ভাবে ধোঁয়ায় ঢেকে থাকে যে, ভরদুপুরেও মনে হয়, সন্ধ্যা নেমেছে।’’ স্থানীয় দেবীপুর, কদভিটা গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, কারখানার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে নির্গত কয়লার গুঁড়ো গ্রাম লাগোয়া রাস্তায় পড়ে থাকে। ওই রাস্তা দিয়ে অনবরত কারখানার সামগ্রীবোঝাই যানবাহন যাতায়াত করে। কিন্তু প্রতিদিন কারখানার তরফে রাস্তায় জল ছেটানো হয় না বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে দিলীপ মুর্মু নামে এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘জোরে বাতাস বইলে বিপদ আরও বাড়ে।’’ তা ছাড়া, দূষণের জন্য বাগানের মাটি নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের একাংশের।
শনিবার বিধায়ক অজয় পোদ্দারেরও অভিযোগ, ‘‘ভোটের প্রচারে গিয়ে গ্রামবাসীর কাছে দূষণের সমস্যার কথা শুনেছি। আমি চাই, কারখানা কর্তৃপক্ষ দূষণ নিযন্ত্রক যন্ত্র ব্যবহার করুন। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলছি।’’ এ দিকে, কারখানার ম্যানেজার সতীশ সিংহও জানিয়েছেন, দূষণ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র কাজ করছে না। এই পরিস্থিতিতে তিনি জানিয়েছেন, ন্যূনতম ৪৫ দিন সময় দেওয়া হোক। তার মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিন্তু একটি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে দূষণের সমস্যা থাকলেও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কী ভূমিকা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। যদিও পর্ষদের জেলা সুপারিন্টেন্ডেন্ট স্বরূপ মণ্ডল বলেন, ‘‘বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছি।’’ কিন্তু এত দিনেও পদক্ষেপ করা হয়নি কেন? পর্ষদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মী ও আধিকারিকদের দাবি, করোনা-পরিস্থিতি, লকডাউন এবং সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যের কড়াকড়ির জন্যই নিয়মিত নজর রাখা যায়নি।
তবে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি (কুলটি) ওমর আলি মোল্লা বলেন, ‘‘গ্রামবাসীর সঙ্গে আলোচনা চলছে। কারখানা কর্তৃপক্ষকে দূষণ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’