পড়ে কাটা গাছ। নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চায়েত অফিসের কাছেই বেআইনি ভাবে গাছ কেটে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে গলসি ২ ব্লকের মসজিদপুরে। এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, গলসি ২-এর ব্লকের তৃণমূলের ‘জয়হিন্দ বাহিনী’র সভাপতি গুল মহম্মদ মোল্লা-সহ একাধিক নেতার মদতেই এই কাজ হয়েছে। গলসি-শিকারপুর রাস্তার পাশ থেকে কাটা ওই সব গাছের বাজারদর ৮০ লক্ষ থেকে এক কোটি টাকা বলেও অভিযোগকারীদের দাবি। বৃহস্পতিবার বিডিও (গলসি ২) সঞ্জীব সেনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের আশঙ্কা, প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ওই রাস্তার উপরে থাকা বাকি গাছও কাটা হয়ে যাবে।
বিডিও বলেন, “অনুমোদন ছাড়া, গাছ কাটা যায় না। অভিযোগ বন দফতরে পাঠিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে।” ডিএফও (বর্ধমান) নিশা গোস্বামী বলেন, ‘‘এমন অভিযোগ এখনও পাইনি। পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ গুল মহম্মদ অভিযোগ মানেননি। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুজন মণ্ডলের দাবি, “কোনও বেআইনি কাজ দল সর্মথন করে না। গাছ কাটার অভিযোগ প্রমাণ হলে, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দল অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গলসি থেকে শিকারপুর যাওয়ার দূরত্ব প্রায় ১৪ কিলোমিটার। রাস্তার বেশির ভাগই মসজিদপুর পঞ্চায়েতের অন্তগর্ত। রাস্তার দু’পাশেই রয়েছে কয়েকশো গাছ। মাস ছ’য়েক আগে ওই রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। গ্রামবাসীর অভিযোগ, মসজিদপুর পঞ্চায়েত অফিসের আশপাশে প্রায় দু’হাজার গাছ কাটা হয়েছে। মাস দু’য়েক আগেই সোনাঝুরি, শিরিষ, বাবলা সহ একাধিক প্রজাতির গাছগুলি কাটা হয়, তাঁদের দাবি। গুসকরা, পাত্রহাটি ও জাগুলিপাড়ার ব্যবসায়ীরা গাছগুলি নিয়ে যান বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, ‘‘আমরা ভেবেছিলাম, সরকারের অনুমোদন নিয়ে রাস্তা সংস্কারের কাজের জন্য গাছ কাটা হচ্ছে। কিন্তু পরে জানতে পারি, গাছ কাটার কোনও অনুমোদন নেওয়া হয়নি। পুরোটাই বেআইনি।’’
অভিযোগকারী শেখ সানি, মীর লালবাবুরাও বলেন, “গাছ কাটার কোনও টেন্ডার হয়নি। সরকারি অনুমোদনও নেওয়া হয়নি। অথচ, পঞ্চায়েত অফিসের কাছ থেকে গাছগুলি কেটে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।” তাঁদের দাবি, প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে বাকি গাছও কেটে বিক্রি হয়ে যাবে।
অভিযুক্ত গুল মহম্মদ মোল্লার দাবি, ‘‘আমি দলের কর্মী। গাছ কে বা কারা কেটেছে জানি না। আমি কোনও ভাবেই জড়িত নই। প্রশাসন তদন্ত করে দেখুক।’’ মসজিদপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান অশোক বাগদি গাছ কাটার কথা স্বীকার করলেও কে বা কারা কেটেছেন, তা জানা নেই বলে দাবি করেছেন। গলসি ২ পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি সংস্কারের কর্মাধ্যক্ষ শেখ সাবিরউদ্দিন আহমেদ বলেন, “গাছগুলি কাটার কোনও অনুমোদন পঞ্চায়েত সমিতি থেকেও দেওয়া হয়নি। কী ভাবে গাছ কাটা হয়েছে আমার জানা নেই।”