অজয় নদ থেকে বালি তোলার সময় উঠে এল জোড়া বিষ্ণুমূর্তি। শুক্রবার ভোরে মঙ্গলকোটের খেঁড়ুয়া গ্রামের বালিঘাট থেকে মূর্তিদুটি মেলে।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, তিন ফুট ও আড়াই ফুটের মূর্তি দু’টি একাদশ-দ্বাদশ শতকের। ত্রিবিক্রম রীতির মূর্তি দুটিতেই বিষ্ণুর দু’পাশে রয়েছেন লক্ষ্মী, সরস্বতী।
তবে উদ্ধারের কিছু ক্ষণের মধ্যেই আমূল বদলে যায় মূর্তি দু’টি। দেখা যায় পাথরের ফিকে রং, কুচকুচে কালো হয়ে গিয়েছে। গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, পুজো-অর্চনার জন্য কেউ কেউ মূর্তি দু’টি জলে ধুয়ে ঘি মাখিয়ে দেন। তাতেই রং বদলে যায়। যদিও বিশেষজ্ঞদের দাবি, ঘি লাগালে পাথরের মূর্তির রং বদলায় না। মূর্তিতে অন্য কিছু লাগানো হয়েছিল কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠছে, পুলিশ, প্রশাসন মূর্তি দু’টি নিজেদের হেফাজতে না রেখে গ্রামবাসীদের কাছে রাখল কেন, তা নিয়েও? ইতিহাসের গন্ধমাখা মূর্তি নষ্ট হয়ে গেলে দায় কার, সে কথাও উঠেছে।
খেঁড়ুয়া বালিঘাটের কর্মীরা জানান, ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ যন্ত্র দিয়ে বালি তোলার সময় কয়েক মিনিটের ব্যবধানে মূর্তি দু’টি পাওয়া যায়। মূর্তিগুলি নিয়ে গিয়ে অজয়ের পাড়ে রাখেন তাঁরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, মূর্তি উদ্ধারের খবর পেয়েই তাঁরা কাটোয়া মহকুমাশাসক, মঙ্গলকোটের বিডিও এবং মঙ্গলকোট থানায় জানান। তত ক্ষণে অনেকে মূর্তি নিয়ে পুজোও শুরু করে দেন। তাঁদের দাবি ছিল, মূর্তি উদ্ধারের খবর জানালেও মূর্তি প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হবে না। বরং মূর্তিতে মালা-ফুল দিয়ে পুজো শুরু করে দেবেন তাঁরা। এ দিনও ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ মূর্তি মেলে। আর পুজো শুরু হয় সাড়ে আটটা নাগাদ। প্রশ্ন উঠছে, প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা সময় পাওয়ার পরেও খেঁড়ুয়া বালিঘাট থেকে মূর্তি দু’টি প্রশাসন নিজের হেফাজতে নিতে পারল না কেন?
কাটোয়ার মহকুমাশাসক মৃদুল হালদার বলেন, “আমি খবর পাওয়া মাত্রই পুলিশকে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তত ক্ষণে পুজোর আয়োজন শুরু হয়ে গিয়েছে। ওই অবস্থায় মূর্তিটি উদ্ধার করতে গেলে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা দেখা দিত।’’ তাঁর আশ্বাস, ‘‘আমরা ওখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে মূর্তিটি উদ্ধার করে প্রত্নবিভাগের হাতে তুলে দেব।” এ দিকে গ্রামবাসীদের একাংশ জানিয়েছেন, মঙ্গলকোট থানা মূর্তিটি উদ্ধার করতে না পেরে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়েছে। সেখানে লেখা রয়েছে, মূর্তিটি তাঁরা নিজেদের হেফাজতে রেখে দিয়েছেন। পুলিশ বা প্রশাসন যখনই মূর্তিটি চাইবেন, তারা ফেরত দিতে বাধ্য থাকবেন।
পুরো বিষয়টিতে প্রশাসনের গাফিলতি দেখছেন অনেকেই। কাটোয়ার বাসিন্দা, প্রত্ন অনুসন্ধিৎসু স্বপন ঠাকুরের প্রশ্ন, “পুজো করতে গিয়ে ওই বাসিন্দাদের হাতে পড়ে মূর্তি নষ্ট হয়ে গেলে তার দায় কে নেবে? পুলিশের উচিত ছিল পিঠ না বাঁচিয়ে মূর্তি দু’টিকে উদ্ধার করা।” জানা গিয়েছে, বেশ কয়েক বছর আগে খেঁড়ুয়াতেই অজয় নদের চর থেকেই একটি প্রাচীন মূর্তি পাওয়া গিয়েছিল। সেই মূর্তিটিকে বেহালায় রাজ্য প্রত্নশালায় নিয়ে যাওয়ার জন্য কর্তারা বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু গ্রামবাসীদের বাধায় সেই চেষ্টা সফল হয়নি।
বালিঘাটের কর্মীরা জানিয়েছেন, অজয় নদের এক পাড়ে খেঁড়ুয়া, অপর পারে কেতুগ্রামের গণপুর। ভোরবেলাতেই গণপুরের মানুষজন দাবি করতে থাকেন, ওই মূর্তি দু’টি তাঁদের গ্রামের। ২০০০ সালে বন্যার সময় অজয়ের ভাঙনে মন্দিরের সঙ্গে মূর্তি দু’টিও জলে চলে যায়। ফলে মূর্তি দু’টি তাঁদের দিতে হবে। কিন্তু গণপুরের হাত থেকে মূর্তি দু’টিকে বাঁচিয়ে পাড়ে নিয়ে আসেন তাঁরা। পুলিশে খবর দেওয়া হয়। তবে পুলিশ আসার আগেই খেঁড়ুয়া গ্রামের ৫০-৬০ জন এসে মূর্তি দু’টি ট্রাক্টরে করে স্থানীয় শিবমন্দিরে নিয়ে চলে যান। গ্রামের বাসিন্দারা অবশ্য কিছু বলতে চাননি।