মালচার যন্ত্রের সাহায্যে নাড়া কাটা চলছে। ত্রিলোকচন্দ্রপুরে। নিজস্ব চিত্র
আমন ধান কাটার মরসুমে নাড়া পোড়ানো অনেকটা কমেছে। এই দাবি করেছে পশ্চিম বর্ধমান জেলা কৃষি দফতর। দফতরের কর্তারা মনে করছেন, এর পিছনে দু’টি কারণ হয়েছে। প্রথমত, লাগাতার সচেতনতা প্রচার। দ্বিতীয়ত, জমিতে পড়ে থাকা নাড়া বা ধান গাছের অংশ ‘শ্রেডার’ বা ‘মালচার’ যন্ত্রের সাহায্যে কেটে কী ভাবে তা ব্যবহার করা, তার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। আর তাতেই সাফল্য মিলছে।
কাঁকসা ব্লক কৃষি আধিকারিক অনির্বাণ বিশ্বাস বলেন, “নাড়াগুলি কেটে জমিতে পড়ে থাকলে, জলে পচে গিয়ে তা জৈব সারে পরিণত হবে। জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পাবে। চাষিদের কাছে এই যন্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনও করা হচ্ছে। পাশাপাশি, নাড়া পোড়ালে কী ক্ষতি হয়, তা-ও বোঝানো হচ্ছে। কে কারণে, গত বছর নাড়া পোড়ানোঅনেকটাই কমেছে।”
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় ধান কাটার যন্ত্র ‘কম্বাইন হারভেস্টরের’ ব্যবহার বেড়েছে। এতে চাষিরা অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভবান হচ্ছেন। কিন্তু যন্ত্রের সাহায্যে ধান কাটতে গিয়ে জমিতে নাড়া বা গাছের অংশ এবং খড় বেশি পরিমাণে পড়ে থাকছে। ফলে, সে সব পোড়ানোর প্রবণতা বাড়ছিল। এই নাড়া পোড়ানোর ফলে জমির উর্বরতা ও নাইট্রোজেন নষ্ট হয়। তেমনই মাটির উপকারী পোকাও মারা যায়। তা ছাড়া পরিবেশ দূষণ ঘটে। আবার নাড়া পোড়াতে গিয়ে অসাবধানতায় দুর্ঘটনাও ঘটেছে মাঝে মধ্যে। গত বছর পূর্ব বর্ধমানের মেমারি এলাকায় নাড়া পোড়ানোর আগুনে দগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে এক ব্যক্তির। গলসি এলাকায় একটি ট্রাক্টর পুড়ে গিয়েছে। দফতরের আধিকারিকেরা জানান, এ কাজ বন্ধে চাষিদের সচেতন করার পাশাপাশি, মালচার যন্ত্রের উপকারিতার বিষয়েও বোঝানো হয়েছে।
কী ভাবে কাজ করে এই মালচার যন্ত্র? এতে অনেকগুলি ফলা থাকে। ওই যন্ত্রটি ট্রাক্টরের পিছনে জুড়ে দেওয়া। ট্রাক্টর চললে গোড়া থেকেই তা নাড়াকে তুলে টুকরো টুকরো করে দেবে। রোদ-জল লেগে তা জৈব সারে পরিণত হবে। এতে জমির উর্বরতাবৃদ্ধি পাবে।
কাঁকসা ব্লক কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, অনেকেই ধান তোলার পরে, সেখানে আনাজ চাষ করে থাকেন। এই যন্ত্রের সাহায্যে নাড়া কাটার ফলে কুচি কুচি অবস্থায় তা মাটিতে পড়ে থাকবে। আনাজ চাষের ক্ষেত্রে যে আচ্ছাদন লাগে, এই নাড়াগুলি দিয়ে সে কাজও করা যাবে। পাশাপাশি, জমিতে জলও কম লাগবে। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় তিন লক্ষ টাকার এই যন্ত্রে ‘কৃষি-যান্ত্রিকরণ’ প্রকল্পে প্রায় ৪০ শতাংশ ভর্তুকিও রয়েছে। কাঁকসা ব্লকে ইতিমধ্যে জনা দুয়েক চাষি এই যন্ত্র কিনেছেন। ত্রিলোকচন্দ্রপুরের শ্রীরূপ মণ্ডল জানান, তিনি সারা বছর ধরেই চাষের কাজ করে থাকেন। এই যন্ত্র ব্যবহারের ফলে জমিতে ট্রাক্টরে চাষ দিতে সুবিধা হচ্ছে। নাড়াও সারেরকাজ করছে।