রথতলায় টায়ার জ্বেলে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।
পুরসভার উপ-প্রশাসক পদ থেকে আইনুল হককে সরানোর দাবিতে এত দিন বিক্ষোভ হচ্ছিল পুর-ভবনের গেটে। এ বার তা নেমে এল রাজপথে। কোনও রাজনৈতিক পতাকা ছাড়া, বর্ধমান শহরের প্রায় ৪০টি জায়গায় পথ অবরোধ হল শনিবার। অবরোধের সামনের সারিতে অবশ্য দেখা গিয়েছে স্থানীয় তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের। এর জেরে, শনিবার বিকেলে ঘণ্টাখানেক কার্যত অচল হয়ে পড়ে বর্ধমান শহর।
তৃণমূলের একাংশের দাবি, এই অবরোধের পিছনে বিধায়ক-গোষ্ঠীর মদত রয়েছে। যদিও বিধায়ক (বর্ধমান দক্ষিণ) খোকন দাস সে কথা মানতে নারাজ। শহর অচল করে অবরোধ-বিক্ষোভ ভাল ভাবে নেওয়া হচ্ছে না বলে দাবি তৃণমূল নেতৃত্বের। দলের পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ ভাবে অবরোধ-বিক্ষোভ কাম্য নয়। যাঁরা এ সব করছেন, তাঁদের বলছি, কোনও ক্ষোভ থাকলে দলকে জানান। দল বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেবে।’’
শহরের কার্জন গেট, গোলাপবাগ মোড়, খাগড়াগড়, বাজেপ্রতাপপুর, রেলসেতু, বীরহাটা, পুলিশ লাইন, বিবেকানন্দ কলেজ মোড়, উল্লাসে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে, বেচারহাট, রথতলা, গোদা-সহ নানা জায়গায় এ দিন বিকেল ৪টে নাগাদ বিক্ষোভ হয়। কোথাও রাস্তায় শুয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা, কোথাও টায়ার জ্বালানো হয়। বাস, ট্রাক থেকে টোটো, বিভিন্ন যানবাহন আটকে পড়ে। জাতীয় সড়কে আটকে পড়া যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বর্ধমান পুরসভাতেও বিক্ষোভ হয় এ দিন। মূল গেট আটকে বিক্ষোভ চলায় নানা কাজে আসা মানুষজন সমস্যায় পড়েন। অনেকে গোলমালের আশঙ্কায় ফিরে যান। শহরের বাসিন্দা অনীশ সেন বলেন, ‘‘জামালপুর থেকে এক আত্মীয়ের একটি শংসাপত্র নিতে আসার কথা। কিন্তু পরিস্থতি বুঝে নিষেধ করা হয়েছে।’’ শুভ্রা মণ্ডল নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আগেও দু’দিন বিক্ষোভ দেখে ঘুরে গিয়েছি।’’ পুরসভার প্রশাসক প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, “থমকে থাকা পরিষেবা দিতে শুরু করেছি। মানুষ নির্ভয়ে পুরসভায় আসুন।’’
বিক্ষোভকারীদের দাবি, ১৯৯৮ সালের ১২ জুলাই খুন হন বাম-বিরোধী শিক্ষক-নেতা, শহরের লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা শরদিন্দু কোনার। পুরভোটে তৎকালীন সিপিএম নেতা আইনুলের বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়া আমজাদ শেখ ‘নিখোঁজ’ হন। তৃণমূল নেতা আব্দুল রবের অভিযোগ, ‘‘এ সব অপরাধের মূল কাণ্ডারি আইনুল হক। তৃণমূলের নিচুতলা থেকে সাধারণ মানুষ কী ভাবে তাঁকে মেনে নেবে? তাই সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমেছেন।’’ বিধায়ক খোকনবাবুর দাবি, ‘‘আইনুল হক পুরসভার দায়িত্ব পাওয়ায় আমাকেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। ঘেরাও করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কথা কেউ শুনছেন না। দলকে জানিয়েছি। আশা করি, সরকারও সাধারণ মানুষের কথা শুনবে।’’
শনিবার বিকেলে পুরসভায় বসে আইনুল হক অবশ্য সব অভিযোগ উড়িয়ে দেন। তিনি শুধু বলেন, ‘‘শহরের উন্নয়নই আমাদের মূল লক্ষ্য। অন্য কিছু নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না।’’ বিজেপি নেতা কল্লোল নন্দনের কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূলের দু’পক্ষের দ্বন্দ্বে শহরবাসী আটকে পড়ছেন!’’ প্রবীণ তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন কাউন্সিলর পরেশ সরকারের দাবি, ‘‘অশান্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছে। দলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ হস্তক্ষেপ করে শহরে শান্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনুক।’’