কুলটির চিনাকুড়ি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
কাজে নিয়োগের দাবিতে গ্রামবাসীর একাংশের বিক্ষোভের জেরে তিন দিন ধরে থমকে রয়েছে কুলটির চিনাকুড়ি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সংস্কারের কাজ। তৃণমূলের পতাকা হাতে বিক্ষোভকারীরা নিজেদের তৃণমূল কর্মী পরিচয় দিয়ে ওই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের গেট অবরুদ্ধ রাখেন। দাবি না মানা হলে অবস্থান উঠবে না বলে জানান তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে যন্ত্রাংশবোঝাই ট্রাকের যাতায়াত বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ সংস্থা কর্তৃপক্ষের।
ইসিএল ১৯৯১ সালে এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি তৈরি করে। কেন্দ্রটি চালানোর জন্য একটি বেসরকারি সংস্থাকে ২০ বছরের ‘লিজ’ দেওয়া হয়। ২০১১-য় লিজের মেয়াদ শেষ হলে ওই সংস্থার অনুরোধে কেন্দ্রটি আরও এক বছর চালানোর অনুমতি দেয় ইসিএল। ২০১২-য় কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু কিছু আইনি জটিলতা থাকায় ছ’বছর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালানোর লিজ দিতে পারেননি ইসিএল কর্তৃপক্ষ। অবশেষে ২০১৮-র মে মাসে ইসিএল কর্তৃপক্ষ ফের দরপত্র ডেকে একটি বেসরকারি সংস্থাকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালানোর জন্য ২০ বছরের লিজ দেন। গত জুলাইয়ে ওই সংস্থাটি কেন্দ্রের দায়িত্বভার হাতে নেয়। সংস্থার জিএম সুব্রত রায় বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের বেশ কিছু যন্ত্রাংশের সংস্কার দরকার। তার জন্য ট্রাকে করে ওই যন্ত্রাংশগুলি বাইরে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কিন্তু গত তিন দিন ধরে বিক্ষোভের জেরে সেই ট্রাকগুলি বাইরে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না।’’
বুধবারও এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, প্রায় তিরিশ জনের একটি দল তৃণমূলের পতাকা টাঙিয়ে কেন্দ্রের গেট বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তাঁরা সবাই নিজেদের শাসক দলের সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তাঁদের পক্ষে জন্মেঞ্জয় মাহাতো বলেন, ‘‘স্থানীয় যুবকদের নিয়োগের দাবি জানিয়েছি। কর্তৃপক্ষ কথা দিয়েও এক জনকেও চাকরি দেয়নি। উল্টে বহিরাগতদের ঢোকাচ্ছে। আমাদের চাকরি না দিলে বিক্ষোভ চলবে।’’ যদিও সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘এ পর্যন্ত আমরা প্রায় ২১ জন স্থানীয়কে নিয়োগ করেছি। উৎপাদন শুরু হলে আরও নিয়োগ করা হবে।’’
কর্তৃপক্ষ জানান, এই মুহূর্তে কয়েক জন ইঞ্জিনিয়ারকে বাইরে থেকে আনা হয়েছে। সমস্যা সমাধানের জন্য স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন সংস্থা কর্তৃপক্ষ। এ দিকে উজ্জ্বলবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানা গিয়েছে তিনি ব্যক্তিগত কাজে এলাকার বাইরে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল এই রকম রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। আমি এলাকায় ফিরে সমস্যার সমাধান করব।’’ তবে এ দিন বিক্ষোভকারীরা তৃণমূল কর্মী বলে দাবি করলেও তৃণমূলের জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন বলেন, ‘‘ওখানে আমাদের কোনও শ্রমিক সংগঠন নেই। আমাদের পতাকা নিয়ে সেখানে বিক্ষোভ দেখানোর বিষয়ে দলের কোনও রকম নির্দেশ বা অনুমোদন নেই। কী ভাবে এসব ঘটছে আমি তদন্ত করে দেখছি।’’