উধাও স্বাস্থ্য-বিধি: দুর্গাপুরের সিধো-কানহো স্টেডিয়ামে। নিজস্ব চিত্র।
কোভিড টিকা দেওয়া নিয়ে শুক্রবার বিক্ষোভ হল দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের সিধো-কানহো স্টেডিয়ামে। ভোর থেকে লাইন দিয়ে ও নাম লিখিয়েও টিকা মেলেনি। কবে টিকা মিলবে তা জানতে চেয়েও সাড়া মেলেনি পুরসভার কর্মীদের কাছ থেকে। এমনই অভিযোগ করে বিক্ষোভ দেখান টিকা না পাওয়া লোকজনের একাংশ।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই স্টেডিয়ামে যে কোনও ওয়ার্ডের বাসিন্দাকেই টিকা দেওয়া হচ্ছে। প্রথম দিকে, অনেকে বিষয়টি না জানায় তেমন ভিড় হত না। তবে গত কয়েকদিন ধরে বেশ ভিড় হচ্ছে। ১৮ থেকে ৪৪ বছর এবং ৪৫ ঊর্ধ্ব, দু’টি বিভাগেই টিকা দেওয়া হচ্ছে। প্রথম বিভাগে ভিড় তেমন নেই। সমস্যা দ্বিতীয় বিভাগ নিয়ে।
পুরসভার ৫ নম্বর বরোর আধিকারিক বিজয়কৃষ্ণ ঠাকুর জানান, এ দিনও একই ভাবে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে টোকেন দেওয়া হয়। তবে টিকা না পেয়ে না পেয়ে অনেকে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন। তাঁদের বক্তব্য, তালিকার বাইরে গিয়ে পছন্দের লোকজনদের ভিতরে ঢুকিয়ে নিয়ে টিকা দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা জানান, ভোর ৪টে থেকে অনেকে লাইন দিয়েছেন অথবা নাম লিখিয়ে গিয়েছেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে, বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ তাঁদের অনেকে বুঝতে পারেন, টিকা মিলবে না। এর পরেই তাঁরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা। রামনাথ গঙ্গোপাধ্যায় নামে এক জন বলেন, ‘‘আজ হল না। শনিবার টিকা দেওয়া হবে কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরও কেউ দিচ্ছেন না।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলা বলেন, ‘‘ভিতরে বেছে-বেছে লোকজন ঢোকানো হচ্ছে। আমরা তাই টিকা পাচ্ছি না।’’ অমলকুমার মণ্ডল নামে এক জনের অভিযোগ, ‘‘সকাল ৬টায় এসেছি। টিকা পাইনি। ভিড়ের চোটে স্বাস্থ্য-বিধি উধাও। টিকা নিতে এসে করোনার সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।’’
কী ভাবে এখানে টিকা দেওয়া হচ্ছে? পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বাস্থ্য দফতর থেকে টিকা আসার পরে, কত জনকে টিকা দেওয়া হবে তা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়। সে অনুযায়ী, ‘টোকেন’ দেওয়া হয় প্রথমে। এর পরে, টোকেন দেখে-দেখে স্টেডিয়ামের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতর থেকে প্রতিষেধকের যত ডোজ় পাঠানো হয়, তার থেকে অনেক বেশি সংখ্যায় মানুষ আসেন টিকা নিতে। ফলে, টিকা না পেয়ে অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে।
যদিও এ দিন যে সব অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তা স্বীকার করেননি দুর্গাপুর পুরসভার ৫ নম্বর বরোর আধিকারিক বিজয়কৃষ্ণ ঠাকুর। তাঁর কথায়, ‘‘নির্দিষ্ট সংখ্যক টোকেন দেওয়া হয়েছে। তাঁদেরই টিকা দেওয়া হয়েছে। এ ভাবেই টিকা দেওয়ার কাজ চলছে গত কয়েকদিন ধরে। যত ডোজ় টিকা আসছে, তত জনকেই টোকেন দেওয়া হচ্ছে।’’ তিনি জানান, সকাল ১০ টায় কার্যালয় খোলার পরেই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয় কত ডোজ় টিকা দেওয়া হবে। তার পরেও বহু মানুষ অপেক্ষা করতে থাকেন, যদি টিকা পাওয়া যায়। বিজয়কৃষ্ণবাবু বলেন, ‘‘আমি নিজে বারবার গিয়ে স্বাস্থ্য-বিধি সম্পর্কে সচেতন করছি। অকারণ অপেক্ষা না করার পরামর্শ দিচ্ছি। তবু টিকার আশায় তাঁরা রয়ে যাচ্ছেন।’’