বাড়ি ফিরেই হোমের বিরুদ্ধে নালিশ তরুণীর

আদালতের নির্দেশে তাঁকে সরকারি হোমে পাঠানো হয়েছিল মাস চারেক আগে। শনিবার তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে চাইল্ডলাইন। রবিবার অসুস্থ হয়ে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরেই হোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তুললেন কেতুগ্রামের এক তরুণী। তাঁর অভিভাবকেরা অবশ্য কোথাও কোনও লিখিত অভিযোগ করেননি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান ও কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৬ ০১:২৪
Share:

হাসপাতালে পোড়া, কাটা দাগ নিয়ে ভর্তি তরুণী। নিজস্ব চিত্র।

আদালতের নির্দেশে তাঁকে সরকারি হোমে পাঠানো হয়েছিল মাস চারেক আগে। শনিবার তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে চাইল্ডলাইন। রবিবার অসুস্থ হয়ে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরেই হোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তুললেন কেতুগ্রামের এক তরুণী। তাঁর অভিভাবকেরা অবশ্য কোথাও কোনও লিখিত অভিযোগ করেননি। পরিবারের দাবি, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলে অভিযোগ করা হবে। অভিযোগ অস্বীকার করেছে বর্ধমান জেলা শিশুকল্যাণ কমিটি।

Advertisement

জেলা শিশুকল্যাণ কমিটির নির্দেশে কেতুগ্রামের আরনা গ্রামের বাসিন্দা, বছর কুড়ির ওই তরুণীকে শনিবার বিকেলে কেতুগ্রাম থানার সাহায্যে বাড়িতে পৌঁছে দেয় চাইল্ডলাইন। এ দিন হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে মেয়েটির দাবি, চার মাস ধরে হোমে তাঁর উপরে নানা শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চলেছে। জানলার ধারে দাঁড়ালে কিংবা কাজ করার সময় কোনও কিছু হাত থেকে পড়ে গেলেই কপালে মার জুটত। তাঁর মতো ওই হোমে থাকা আরও অনেক মেয়েকেও মারধর করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওই তরুণীর হাতে ও পিঠে মারধরের দাগ রয়েছে। তরুণীর মা বলেন, “আমার মেয়ে প্রায় চার মাস বাড়িতে ছিল না। শনিবার বাড়ি ফিরেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। হাতে-পিঠে নির্যাতনের দাগ দেখে আঁৎকে উঠি।”

জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের পাল্টা দাবি, এই অভিযোগ একেবারেই মনগড়া। যে হাতের দাগ দেখিয়ে মারধর করার দাবি তরুণী করছেন, আদতে তা অনেকটাই পুরনো। এবং হোমে আসার আগেই তাঁর হাতে ওই দাগ ছিল। পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, মাস চারেক আগে গ্রামেরই এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সঙ্গে প্রণয় সূত্রে গ্রাম ছেড়েছিলেন ওই তরুণী। দু’দিন পর ওই কিশোরের বাড়ির লোকেরা তাঁদের গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। কিন্তু, তরুণীর পরিবার তাঁকে ঘরে ফেরাতে রাজি হয়নি। তখন গ্রামের বাসিন্দারা মীমাংসায় বসার জন্য তাদের কাছে আবেদন জানায়। ওই পরিবার অনড় থাকায় মীমাংসা পর্যন্ত বিষয়টি গড়ায়নি। ওই গ্রামের বাসিন্দা, স্থানীয় আগড়ডাঙা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সবুজ ইসলাম বলেন, “আমাদের কাছে দু’পক্ষই এসেছিল। আমরা কেতুগ্রাম থানায় বিষয়টি জানিয়েছিলাম। থানায় বসে ওই তরুণী লিখিত ভাবে পুলিশকে জানিয়েছিল, সে বাড়িতে যেতে রাজি, কিন্তু তাঁর আশঙ্কা, পরিবারের লোকেরা তাঁকে ভিন্ রাজ্যে বিক্রি করে দিতে পারে। পুলিশ ওই বয়ান শুনে চাইল্ডলাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তার পর আদালত মারফত ওই কিশোর ও তরুণী, দু’জনকেই হোমে পাঠানো হয়।”

Advertisement

এর কিছুদিন পরেই কিশোরের পরিবার শিশুকল্যাণ কমিটিতে আবেদন করে তাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসে। কিন্তু, তরুণীর পরিবার ওই কমিটির কাছে কোনও আবেদন না করায় তিনি বর্ধমানের ঢলদিঘির কাছে হোমেই থেকে যায়। সম্প্রতি ওই তরুণীর বয়স সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর শিশুকল্যাণ কমিটি তাঁকে বাড়ি পাঠানোর নির্দেশ দেয়।

এটা ঘটনা যে, এর আগেও ওই সরকারি হোমের বিরুদ্ধে আবাসিকদের অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আবাসিকেরা হোম ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেছেন—এমন ঘটনাও ঘটেছে। এমনকী হোমে থাকা নাবালিকাদের দিয়ে বাসন মাজা, জল আনানোর কাজ করানো হয় বলেও বারবার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু, এ ক্ষেত্রে ওই তরুণীর কথা বিশ্বাস করতে নারাজ শিশুকল্যাণ কমিটি। কমিটির এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সত্যজিৎ দাশগুপ্ত বলেন, “আমরা অনেকবার কাউন্সেলিং করার পরে ওকে বাড়ি পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু এই অভিযোগ বিশ্বাস হচ্ছে না।” জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের শিশুসুরক্ষা আধিকারিক সুদেষ্ণা মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “হোমে আসার আগেই মেয়েটির হাতে ওই দাগ ছিল। আমাদের ধারণা, মশা মারার ধূপ দিয়ে নিজের হাত পুড়িয়েছে ওই তরুণী।” জেলা পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা বলেন, ‘‘অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement