পানাগড়ের ‘কাবাড়ি মার্কেটে’। নিজস্ব চিত্র
প্রতি বছর বিশ্বকর্মা পুজোর দু’দিন আগে থেকেই তোড়জোড় শুরু হয়ে যায় গ্যারাজগুলিতে। কিন্তু এ বছর করোনার সংক্রমণের জেরে খুব বড় করে পুজোর আয়োজন করছেন না ব্যবসায়ীরা। কাজেই বিশ্বকর্মা পুজো চলে এলেও, ব্যস্ততা তেমন নজরে আসেনি কাঁকসার পানাগড়ের পুরনো গাড়ির যন্ত্রাংশ কেনাবেচার বাজারে।
কাঁকসা ব্লকের সব থেকে বড় বাজার এবং ব্লকের মূল বাণিজ্যকেন্দ্র পানাগড়। শুধু কাঁকসা ব্লকই নয়। আশপাশের বুদবুদ, আউশগ্রাম, গলসির বহু মানুষের কাছেই এই বাজারের কদর রয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় থেকে অন্য সামগ্রীর জন্য পানাগড় বাজারের উপরেই ভরসা করে থাকেন কাঁকসা-সহ আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা। তবে পানাগড়ের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে পুরনো গাড়ির যন্ত্রাংশ কেনাবেচার বাজার। পানাগড়ের দার্জিলিং মোড় থেকে রেলগেট পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে অজস্র ছোট বড় দোকান রয়েছে। পানাগড়ের এই বাজার ‘কাবাড়ি মার্কেট’ বলেও পরিচিত। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গাড়ি নিয়ে এখানে মানুষজন ভিড় করেন। কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান জড়িয়ে রয়েছে এই বাজারে। আর গাড়ির এই বাজার এলাকায় সব থেকে বড় উৎসব বিশ্বকর্মা পুজো। এখানকার মানুষের কাছে এই পুজো দুর্গাপুজোর থেকে কোনও অংশে কম নয়।
কিন্তু এ বার পরিস্থিতি একেবারে আলাদা, বলছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, এক হাজারেরও বেশি বিশ্বকর্মা পুজো হয় এখানে। তিন দিন উৎসবের আমেজ থাকে সর্বত্র। বড় বড় প্রতিমা, সাউন্ড বক্স বাজিয়ে চলে পুজো। কিন্তু রাত পোহালেই বিশ্বকর্মা পুজো হলেও সে উৎসবের আমেজ মেলেনি মঙ্গলবার সকালেও। ব্যবসায়ী দীপক ভল্লা জানান, পানাগড়ে মূলত ভিন্ জেলা ও রাজ্য থেকে ক্রেতারা আসেন। কিন্তু করোনার জেরে বাইরে থেকে কেউ আসতে পারছেন না। ফলে, তাঁদের কারবারে মন্দা দেখা দিয়েছে। পুজো হচ্ছে। কিন্তু বড় প্রতিমার জায়গায় ছোট প্রতিমা আনা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘এখন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের হাল খুব খারাপ। কাজেই সকলেই পুজোর বাজেটে কাটছাঁট করেছি।’’
এর প্রভাব পড়েছে স্থানীয় মৃৎশিল্পীদের উপরেও। কাঁকসার মৃৎশিল্পী ধনঞ্জয় দাস জানান, প্রতি বছর তিনি ৩৫০-৪০০টি বিশ্বকর্মা মূর্তি তৈরি করেন। কিন্তু এ বার সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫০টির মতো। বড় মূর্তি নেই বললেই চলে। তিনি বলেন, ‘‘প্রথম দিকে কোনও বায়না না আসায় চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু পুজোর কয়েক দিন আগে সবই প্রায় বায়না হয়ে গিয়েছে। তবে আয় গত বছরের অর্ধেকের থেকেও কম হয়েছে।’’