বিকল্পের জন্য ভরসা নাচন ড্যাম

দুর্গাপুর পুর-এলাকা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরেই দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকে রয়েছে নাচন জলাধার। বনভূমির মাঝে ঢালু জমিতে প্রাকৃতিক কারণে আশপাশের উঁচু জায়গা থেকে বৃষ্টির জল গিয়ে জমা হত সেখানে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:০০
Share:

এই জলাধারকে ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়েছে প্রশাসন। নিজস্ব চিত্র

জলধারণ ক্ষমতা বাড়িয়ে তা সেচের কাজে লাগানো হবে। এই উদ্দেশ্যে দুর্গাপুর শহরের অদূরে থাকা নাচন ড্যামের (জলাধার) সংস্কারের পরিকল্পনা নিয়েছে প্রশাসন। পাশাপাশি, দুর্গাপুর শহরে বিকল্প পানীয় জলের উৎস হিসেবে এই জলাধারের জল ব্যবহার করার পরিকল্পনা নিয়েও ভাবনা শুরু হয়েছে।

Advertisement

দুর্গাপুর পুর-এলাকা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরেই দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকে রয়েছে নাচন জলাধার। বনভূমির মাঝে ঢালু জমিতে প্রাকৃতিক কারণে আশপাশের উঁচু জায়গা থেকে বৃষ্টির জল গিয়ে জমা হত সেখানে। প্রায় ৪৫ বছর আগে সেচ দফতর ওই নিচু জায়গাটির সংস্কার করে একটি জলাধার গড়ে তোলে। বর্তমানে জলাধারের আয়তন প্রায় ৩০ একর অর্থাৎ ৭৫ বিঘা। গভীরতা প্রায় ৮ ফুট। গড়ে সারা বছর সাড়ে ৫ ফুট গভীর পর্যন্ত জল থাকে। জলাধারের গভীরতা বাড়িয়ে সংলগ্ন আরও ২ হাজার একর কৃষিজমিকে সেচের আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে প্রশাসন। এর ফলে ওই এলাকার একফসলি জমিতে বছরে একাধিক শস্য উৎপাদনের সুযোগ পাবেন চাষিরা। সে জন্য জলাধারের গভীরতা আরও ৪ ফুট বাড়ানো দরকার।

সম্প্রতি রাজ্যের জল সম্পদ দফতরের প্রধান সচিব সুব্রত গুপ্ত নাচন জলাধার পরিদর্শনে যান। সঙ্গে ছিলেন মহকুমাশাসক শঙ্খ সাঁতরা-সহ অন্য আধিকারিকেরা। ওই দিনই প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁর কাছে পরিকল্পনার কথা তুলে ধরা হয়। সুব্রতবাবু পরিকল্পনার বিস্তারিত খসড়া পাঠানোর পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে দুর্গাপুর শহরে ভবিষ্যতে আপতকালীন পরিস্থিতিতে বিকল্প জলের উৎস হিসেবে কীভাবে এই জলাধারকে কাজে লাগানো যায় সে ব্যাপারেও ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই নাচন জলাধারকে দুর্গাপুরের বিকল্প জলাধার হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে মহকুমা প্রশাসনের কাছে। বিডিও শুভ সিংহরায় বলেন, ‘‘জলাধারে জলের পরিমাণ বাড়াতে পারলে একদিকে সেচ সেবিত জমির পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। কৃষিকাজের উন্নতি হবে। তা ছাড়া দুর্গাপুরে পানীয় জলের বিকল্প উৎস নিয়ে চিন্তা অনেকটা দূর হবে।’’

হঠাৎ করে বিকল্প নিয়ে ভাবনা কেন? দুর্গাপুর শহরে পানীয় জলের প্রধান উৎস দামোদর নদ। দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে জল তুলে তা শোধন করে শহরে বাড়ি বাড়ি সরবরাহ করা হয়ে থাকে। গত মাসে ব্যারাজের ১ নম্বর লকগেট বেঁকে গিয়ে জল বেরিয়ে যেতে শুরু করে। বহু চেষ্টা করেও জল আটকানো যায়নি। শেষ পর্যন্ত ব্যারাজের সব জল বের করে দিয়ে, তবে লকগেটের মেরামতি করতে হয়। এর ফলে শহর কার্যত নির্জলা হয়ে পড়ে। তেমন পরিস্থিতি যাতে ফের না হয় তা নিশ্চিত করতে তখন থেকেই বিকল্প জলাধারের খোঁজ শুরু হয়েছে দু্র্গাপুরে।

দুর্গাপুরের মেয়র দিলীপ অগস্তি বলেন, ‘‘মহকুমাশাসকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতিকে সঙ্গে নিয়ে জলাধারের আয়তন আরও বাড়াতে হবে।’’ মহকুমাশাসক শঙ্খ সাঁতরা বলেন, ‘‘নাচন জলাধারে সারা বছর বেশ কিছু পরিমাণ জল জমে থাকে। ওই জলাধারকে দুর্গাপুর শহরের পানীয় জলের অতিরিক্ত উৎস হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে। তা হলে ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি ফের এলে বা ব্যারাজ সংস্কার করতে হলে সমস্যায় পড়তে হবে না শহরবাসীকে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement