ধৃত কৃষ্ণ হাঁসদা। নিজস্ব চিত্র
মাঝরাতে স্বামী কৃষ্ণ হাঁসদার রক্তলাগা জামা দেখে আঁতকে উঠেছিলেন স্ত্রী। জিজ্ঞাসা করায় জবাব মিলেছিল, ‘মদের ঘোরে মারপিট হয়েছে’। পরের দিন সকালে ওই বাড়ির কাছেই সাঁইপুকুর থেকে দেহ মেলে রায়নার মাধবডিহির তৃণমূল নেতা অনিল মাঝির। গ্রেফতার করা হয় কৃষ্ণকে। পুলিশের দাবি, ধৃত জেরায় তাদের জানিয়েছেন, ওই রাতে মদের আসরে বিজেপি করা নিয়ে রাগারাগি করেন অনিলবাবু। চড়ও মারেন তাঁকে। সেই রাগেই বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে, খুঁচিয়ে খুন করা হয় ওই নেতাকে।
বুধবার রাতে নিহত অনিলবাবু স্ত্রী অনিতাদেবী মাধবডিহি থানায় সাত জনের নামে অভিযোগ করেন। অভিযুক্তেরা প্রত্যেকেই এলাকায় বিজেপি নেতা-কর্মী বলে পরিচিত। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, রাজনৈতিক শত্রুতার কারণে সাধন মল্লিকের নির্দেশে তাঁর স্বামীকে খুন করে পুকুরে দেহ ফেলা হয়েছে। এই খুনের পিছনে অচিন্ত্য পাঁজা, পলাশ মালিক, বরুণ পাত্র, হানিফ খান ও প্রভাস ক্ষেত্রপালরা জড়িয়ে রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
তৃণমূলের ব্লক সভাপতি (রায়না ২) আনসার আলি খান বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই বলছি, বিজেপির লোকেরাই আমাদের সক্রিয় কর্মীকে খুন করেছে। কৃষ্ণ গ্রেফতারের পরে সেটাই প্রমাণ হল। বাকিরাও যাতে দ্রুত ধরা পড়ে সে জন্য প্রশাসনকে বলা হয়েছে।’’ বিজেপির পাল্টা অভিযোগ, বৃহস্পতিবার বিকেলে তৃণমূল শোক মিছিলের ডাক দিয়েছিল। শোক মিছিলের নামে বিজেপি সমর্থকদের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। জেলা বিজেপির মুখপাত্র (রায়না-খণ্ডঘোষ) বিজন মণ্ডলের দাবি, “অন্তত ৩০ জন কর্মী-সমর্থক ঘরছাড়া হয়েছেন।’’
পুলিশের দাবি, ঘটনার দিন রাতে কৃষ্ণ হাঁসদা ও অনিল মাঝিকে অন্তত দু’জন দেখেছিলেন। সেই সূত্র ধরে কৃষ্ণকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই ঘটনার কথা স্বীকার করেন ধৃত। পুলিশের দাবি, জেরায় তিনি তাদের জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলের কাছেই তিন জন মিলে মদের আসর চলছিল। সেই সময় মাধবডিহি-আলমপুর রোড ধরে মোটরবাইক নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন অনিলবাবু। মদের আসর দেখে তিনি দাঁড়িয়ে পড়েন। ডাক পেতেই রাস্তার ধারে বাইক রেখে আসরে চলে যান। তিনি আসায় বাকি দু’জন চলে যায়, দাবি ধৃতের। পুলিশের দাবি, কৃষ্ণর কথা অনুযায়ী, মদ খাওয়ার সময় তিনি কেন বিজেপি করছেন, সে প্রশ্ন তোলেন অনিলবাবু। এ নিয়ে প্রতিবাদ করাতে চড় মারেন। পড়ে গিয়ে মাথায় রাগ চড়ে যায় কৃষ্ণের। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত জেরায় কবুল করেছে, অনিলবাবু আসর থেকে উঠে মোটরবাইকে চাপতেই পাশের মুরগির দোকান থেকে মোটা বাঁশ এনে তাঁর মাথায় মারেন কৃষ্ণ।
পুলিশ জানায়, পরে দেহটি টানতে টানতে পুকুর পাড়ে নিয়ে যান ধৃত। মৃত্যু নিশ্চিত করতে সাত ফুটের ওই বাঁশ দিয়ে ফের এক প্রস্ত মারা হয় অনিলকে। নিথর দেহটিকে টানতে টানতে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। কেউ যাতে না দেখতে পায় সেই কারণে পুকুরে পুঁতে দেওয়া হয় দেহ। পরে বাইকটিও রাস্তার পাশের পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের দেখানো জায়গা থেকে দু’টি বাঁশ উদ্ধার হয়েছে। তবে নিহতের মোবাইলটি পাওয়া যায়নি।
এ দিন ধৃতকে আদালতে তোলা হলে বিচারক ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতকে হেফাজতে নিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করলেই মোবাইল মিলবে। বাকি অভিযুক্তদেরও হদিস মিলবে। পুলিশের গাড়িতে বসে ধৃত বলেন, “আমাকে চড় না মারলে কিছুই হত না।”