—নিজস্ব চিত্র।
১১ বছরের বড় বিধবা বৌদির একতরফা প্রেমে পড়েছিলেন ১৯ বছর বয়সি এক তরুণ। অভিযোগ, বৌদিকে নানান কুপ্রস্তাব দিতেন তিনি। নানা ভাবে উত্যক্তও করতেন। কিন্তু দেওরকে তেমন পাত্তা দিতেন না বৌদি। সেই রাগে তাঁকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে পালিয়েছিলেন ওই তরুণ। কয়েক ঘণ্টা গা-ঢাকা দিয়ে থাকার পর অবশেষে শনিবার পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে।
ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া থানার পানুহাট এলাকায়। স্বামী মারা যাওয়ার পর শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন চুমকি বৈরাগ্য নামে এক মহিলা। অভিযোগ, তাঁর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন ১৯ বছর বয়সি দেওর প্রবীণ বৈরাগ্য। বিষয়টি জানতে পেরে ছেলেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন তাঁর বাবা-মা। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত ছেলেকে ত্যাজ্য পুত্র করেন তাঁর বাবা পূর্ণচন্দ্র বৈরাগ্য। তার পরও বৌদিকে নানা ভাবে উত্যক্ত করতেন প্রবীণ। জোরাজুরি করায় তাঁর বিরুদ্ধে মাস তিনেক আগে শ্লীলতাহানি ও মারধরের অভিযোগও দায়ের করেছিলেন বিধবা মহিলা। সেই আক্রোশেই বিধবা মহিলাকে এলোপাথাড়ি ছুরি চালিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠল প্রবীণের বিরুদ্ধে। গুরুতর জখম অবস্থায় চুমকিকে উদ্ধার করে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বুঝে চিকিৎসকেরা বর্ধমান মেডিকেল কলেজে স্থানান্তরিত করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পানুহাট বৈরাগ্যপাড়ার বাসিন্দা চুমকির স্বামী নরোত্তম বৈরাগ্য পেশায় ছিলেন এক জন লরির চালক। বছর চারেক আগে পথ দুর্ঘটনায় নরোত্তমে মৃত্যু হয়। এক ছেলে এবং এক মেয়েকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন চুমকি। ছেলে নবীন অষ্টম শ্রেণীতে এবং মেয়ে শুভশ্রী দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে।
জানা গিয়েছে, প্রতি দিনের মত শুক্রবার বিকেলে মেয়েকে স্কুল থেকে আনতে যাচ্ছিলেন চুমকি। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরেই তাঁর উপর হামলা হয়। অভিযোগ, প্রবীণ একটি ধারালো ছুরি হাতে চুমকির উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। জখম মহিলার ছেলে নবীন বলে, ‘‘আমার মায়ের উপর খারাপ নজর দিত প্রবীণ। মা রাজি ছিলেন না। এক দিন আমাদের বাড়িতে ঢুকে মাকে মারধর করেন। মা থানায় অভিযোগও করেছিল। থানায় অভিযোগ করায় মাকে হুমকি দিতেন প্রবীণ।’’
যদিও অভিযুক্ত যুবকের বাবা পূর্ণচন্দ্রের দাবি, ‘‘চুমকির সঙ্গে আমার ছেলের অবৈধ সম্পর্ক ছিল। ১১ বছরের বড় কোনও মহিলার সঙ্গে কি ওই সম্পর্ক মানা যায়? তাই ছেলেকে সরে আসতে বলেছিলাম। শোনেনি। অবাধ্য ছেলের জন্য তিতিবিরক্ত হয়ে আমি ওকে ত্যাজ্য পুত্র করে দিয়েছি। তার কাগজও আমার কাছে আছে। এর পর কী ঘটেছে আমাদের জানা নেই।’’
ঘটনার খবর পেয়ে শুক্রবারই এলাকায় আসে পুলিশ। তদন্তকারীরা অফিসারেরা হাসপাতালে গিয়ে জখম বধূর জবানবন্দি নেওয়ার চেষ্টা করেন। শুক্রবারের ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিলেন প্রবীণ। তবে রাতে পানুহাট বাজার এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে কাটোয়া থানার পুলিশ। ধৃতকে সঙ্গে নিয়ে ওই এলাকার রাস্তার ধারে ঝোপ থেকে একটি ছুরি উদ্ধার করে পুলিশ। অনুমান, সেই ছুরি দিয়েই হামলা চালানো হয়েছিল। শনিবার ধৃতকে কাটোয়া মহকুমা আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাঁকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।