আত্মঘাতী মা। নিজস্ব চিত্র।
এক বছরের ছেলেকে বিষ খাইয়ে মেরে নিজে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হলেন মা। আসানসোলের হীরাপুর থানার রাধানগর এলাকার ঘটনা। মৃতদের নাম অন্তর্হিত মাজি (১) এবং বৈশাখী মাজি (৪০)। পুলিশ দু’টি দেহ উদ্ধার করে মঙ্গলবার সকালে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। মৃতদেহের পাশ থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেখানে বিষ খাইয়ে ছেলেকে মারা এবং নিজের আত্মহত্যার কারণ লিখে গিয়েছেন বৈশাখী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈশাখী আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্যদ (এডিডিএ) কর্মী ছিলেন। তাঁর স্বামী অনুপম মাজি পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে কর্মরত। বৈশাখীর ভাই কল্যাণ মাজি জানিয়েছেন, তাঁর দিদির একমাত্র ছেলে কানে শুনতে পেত না। বহু চিকিৎসাতেও কোনও কাজ হয়নি। চিকিৎসকেরা একপ্রকার জবাব দিয়ে দিয়েছিলেন। ছেলের এই কষ্ট সহ্য করতে পারতেন না বৈশাখী। কল্যাণের কথায়, ‘‘বেশ কিছু দিন ধরেই দিদি মানসিক অবসাদে ভুগছিল। সেখান থেকেই এমনটা করেছে।’’
পুলিশ জানিয়েছে, বৈশাখীর দেহের পাশ থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছে। সেখানেও ছেলের শারীরিক সমস্যার কারণে যে তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সে কথা লিখেছেন বৈশাখী। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘আমি পারলাম না। সম্ভব নয় আমার পক্ষে। জীবনে আর কত সহ্য করব! আমার বাচ্চাটা চোখের সামনে বড় হবে, অথচ স্বাভাবিক নয়, এটা মেনে নেওয়া যায় না। তাই আমি আমার সন্তাকে নিয়ে চললাম’।
উদ্ধার হওয়া সুইসাইড নোট।
পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, অনুপম তখন কাটোয়ায় ছিলেন। বাচ্চাকে নিয়ে বৈশাখী একাই বাড়ির উপরতলায় থাকতেন। নীচের তলায় থাকতেন বৈশাখীর শ্বশুর-শাশুড়ি। এ দিন সকালে কাজে যাওয়ার সময় তাঁর শ্বশুর ধর্মদাস দেখেন যে, বৈশাখী তখনও ওঠেননি। অন্য দিন তৈরি হয়ে অফিস যাওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। ডাকাডাকি করেও সাড়া না পাওয়ায় বৈশাখীর বাপেরবাড়িতে খবর দেওয়া হয়। তাঁর ভাই কল্যাণ আসেন। দরজা ভেঙে দেখা যায়, বাচ্চাটা নীচে শুয়ে রয়েছে। মুখ দিয়ে ফেনা বার হচ্ছে। আর বৈশাখী ঝুলছেন ছাদ থেকে। খবর পেয়ে পাড়া-প্রতিবেশীরা আসেন। আসে হীরাপুর থানার পুলিশ। দেহ দুটো উদ্ধার করে পাঠানো হয় হাসপাতালে।
স্থানীয় বিধায়ক তথা বৈশাখী যেখানে কাজ করতেন সেই এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘উনি খুব ভাল মানুষ ছিলেন। ভাল কাজ করতেন। ছেলেকে নিয়ে সমস্যায় আছেন সেটা জনতাম। কিন্তু এমন সিদ্ধান্ত নিলেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক।’’