আউশগ্রামের কেঁওতলায় পুলিশ। ছবি: প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
ডাইনি অপবাদে এক মহিলাকে বেঁধে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে আউশগ্রামে। রবিবার আউশগ্রামের দিগনগর ১ পঞ্চায়েত এলাকার কেঁওতলা আদিবাসী পাড়ায় ওই মহিলাকে উদ্ধার করতে যায় পুলিশ। পুলিশের গাড়ি আটকে রেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ বিক্ষোভ দেখান বলে অভিযোগ। পরে জেলা পুলিশের ডিএসপি (ডিএনটি) অরিজিৎ পালচৌধুরীর নেতৃত্বে বিরাট পুলিশ বাহিনী এলাকায় যায়। দফায় দফায় আলোচনার পরে ওই মহিলাকে উদ্ধার করা হয়। তিন জনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ।
প্রশাসনের তরফে বারবার প্রচার, মোড়লদের নিয়ে সভা করার পরেও এই ধরনের কুসংস্কারের ঘটনা জেলায় শোনা যায়। প্রশ্ন ওঠে, শিক্ষা, সচেতনতা নিয়ে। জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি দেবু টুডুর অবশ্য দাবি, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে প্রচার চালানোর ফলে জেলায় এই ধরনের সমস্যা নেই। বিচ্ছিন্ন ভাবে এই ধরনের ঘটনা কোথাও হয়ে থাকলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্য কোনও কারণ জড়িয়ে আছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হবে।’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানান, এ দিন সকালে গ্রামের মনসা মন্দিরের এক পূজারি মহিলার ‘ভর’ ওঠে। তিনিই ওই মহিলাকে ডাইনি অপবাদ দেন বলে অভিযোগ। এর পরেই পাড়ার লোকজন বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁকে টেনে বার করে মারাংবুরু তলায় বেঁধে রাখেন বলে অভিযোগ। তাঁদের দাবি, ওই মহিলা পাড়ার কার কার ক্ষতি করেছেন তা স্বীকার করেছেন। আরও কয়েকজনের ক্ষতি করার হুমকি দিয়েছেন। যদিও এমন অভিযোগ মানেনি পরিবার।
জানা গিয়েছে, বছর পঞ্চান্নর বয়সের ওই মহিলার এক ছেলে এবং দুই মেয়ে রয়েছে। সকলেই বিবাহিত। তাঁর স্বামীর দাবি, “মনসা পুজো উপলক্ষে আমার বাড়িতে নাতিরা এসেছিল। বৌকে মাছ রাঁধতে বলে মনিব বাড়িতে টাকা আনতে গিয়েছিলাম। ফিরে দেখি অনেক লোকজন জড়ো হয়ে আমার বৌকে বাড়ি থেকে টেনে বার করে পাড়ার মন্দিরে এনে বেঁধে রেখেছে।’’ তাঁর দাবি, “পুজোতে বসে এক মহিলা না কি আমার বৌকে ডাইনি বলেছে। কিন্তু ও একেবারেই স্বাভাবিক, সুস্থ।’’
খবর পেয়ে এলাকায় যায় পুলিশ। ওই মহিলাকে গাড়িতে চাপিয়ে আনার চেষ্টা করা হলে বাসিন্দাদের একাংশ গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখান। গাড়ির সামনে, পিছনে কাঠের গুঁড়ি ফেলে দেওয়া হয়। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধ্বস্তাধস্তিও হয় বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি সামলাতে ব্লক প্রশাসনের প্রতিনিধিরাও এলাকায় যান।
আউশগ্রাম ১-এর বিডিও চিত্তজিৎ বসু বলেন, ‘‘এলাকায় কয়েকদিন ধরে মনসা পুজো চলছে। পুজোর সময়ে ওই মহিলার সঙ্গে পাড়ার এক জনের গণ্ডগোল হয়েছিল বলে শোনা যাচ্ছে। এর পরেই ওই মহিলাকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে পাড়ার এক জায়গায় এনে বেঁধে রাখা হয়। খবর পেয়েই এলাকায় প্রতিনিধি পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হয়। ওই মহিলাকে উদ্ধার করা হয়েছে।’’ সামনের সপ্তাহে ব্লকের মোড়লদের নিয়ে ডাইনি প্রথার মতো কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক সভা করা হবে বলেও জানান তিনি। ডিএসপি (ডিএনটি) অরিজিৎ পালচৌধুরী জানান, পাড়ার বাসিন্দাদের বুঝিয়ে ওই মহিলাকে উদ্ধার করে আনা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে দুই মহিলা-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।