গাছ লাগাচ্ছেন রামমোহন। —নিজস্ব চিত্র।
বছর তেরো আগে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার জুনিয়র ম্যানেজার পদ থেকে অবসর নেন আউশগ্রামের বননবগ্রামের রামমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর থেকে ফাঁকা জায়গা পেলেই বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ লাগানো তাঁর নেশা। এখনও পর্যন্ত হাজার দুয়েক গাছ লাগানো শুধু নয়, নিয়মিত সেগুলি পরিচর্যাও করেন, জানান তিনি। সে জন্য পেনশনের একটি অংশও খরচ করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আউশগ্রাম থেকে মোরবাঁধ যাওয়ার রাস্তার ধারে, গ্রামের ভিতরে, কাঁদরের ধারে ফাঁকা জায়গা পেলেই আম, জাম, লেবু, পেয়ারা-সহ বিভিন্ন ফলের গাছের চারা বসান রামমোহন।
বছর দশেক আগে স্ত্রী প্রয়াত হয়েছে তাঁর। ছেলে কর্মসূত্রে এবং মেয়ে বিবাহসূত্রে বাইরে থাকেন। বৃক্ষরোপণে তাঁকে সাহায্য করেন স্থানীয় দুই বাসিন্দা খোকন মেটে ও বগলা মেটে। কলমের চারা বেশি দিন টিকবে না, এ কথা ভেবে নিজের একচিলতে জায়গায় বীজ থেকে চারা তৈরি করেন। বাড়ি বাড়ি ঘুরে, বন দফতর থেকে চারা সংগ্রহ করেন।
বৃদ্ধ বলেন, “আগে যে ভাবে রাস্তার ধারে ফলের বড় গাছ দেখা যেত, এখন তা দেখা যায় না। তাই অবসরের পরে বসে থাকার পরিবর্তে এই কাজ করছি। তা সমাজের উপকারে লাগবে। পথচলতি মানুষ ছায়া পাবেন, ফলও মিলবে।’’
গাছের চারা রক্ষণাবেক্ষণে তারের জাল, বাঁশের খুঁটি দিয়ে ঘেরার ব্যবস্থা করেন। কোনও জায়গায় চারা বসানোর আগে সেখানে গর্ত খুড়ে জৈব সার দেন। তাঁর দাবি, “মাসে ৪-৫ হাজার টাকা খরচ হয়। পেনশন থেকেই খরচ করি।’’
সম্প্রতি তাঁর বসানো কয়েকটি গাছ নষ্ট করা হয়েছে বলে তিনি প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “গাছের ক্ষতি করলে খুব কষ্ট হয়।’’
স্থানীয় বাসিন্দা ইন্দ্রজিৎ শীল বলেন, “রাতেও যদি খবর পান, কেউ গাছের ক্ষতি করছে, সঙ্গে সঙ্গেই হাজির হয়ে গিয়ে প্রতিবাদ করেন রামমোহনবাবু।’’
আউশগ্রাম বন দফতরের বিট অফিসার হিমাংশু মণ্ডল বলেন, “আমরা যত চারা দিয়েছি, কোনও চারা উনি নষ্ট করেননি। গাছের প্রতি এই ভালবাসা, মমত্ববোধ বিরল।’’
তাঁর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিডিও (আউশগ্রাম ১) অরিন্দম মুখোপাধ্যায়, বর্ধমানের বনাধিকারিক নিশা গোস্বামীরা।