ক্ষতিপূরণের দাবিতে দিনভর বিক্ষোভ-অবরোধ, দফায়-দফায় বাস ভাঙচুরের অভিযোগ

বাসের ধাক্কায় যুবকের মৃত্যু, তপ্ত বেনাচিতি

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ বেনাচিতির শালবাগানের বাসিন্দা সঞ্জয় গুপ্ত (২৫) ছটপুজো শেষে মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়েছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৫২
Share:

ধুন্ধুমার: অবরুদ্ধ রাস্তা। ছবি: বিকাশ মশান

মিনিবাসের ধাক্কায় মোটরবাইক আরোহী এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে রবিবার সকালে তেতে উঠল দুর্গাপুরের বেনাচিতি বাজার এলাকা। ক্ষতিপূরণের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান মৃতের পরিজন ও পড়শিরা। অবরোধ-বিক্ষোভ চলাকালীন কয়েকটি মিনিবাস ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। ঘণ্টা সাতেক ধরে গোলমাল চলার পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ লাঠি চালিয়েছে বলে অভিযোগ। যদিও তা পুলিশ মানতে চায়নি।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ বেনাচিতির শালবাগানের বাসিন্দা সঞ্জয় গুপ্ত (২৫) ছটপুজো শেষে মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়েছিলেন। বেনাচিতি বাজারে একটি মিনিবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মারলে গুরুতর জখম হন সঞ্জয়। তাঁকে সিটি সেন্টারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে ‘মৃত’ ঘোষণা করা হয়।

এর পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন মৃতের পরিজন ও এলাকাবাসীর একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, মিনিবাস‌ের বেপরোয়া গতির বলি হয়েছে সঞ্জয়। অবিলম্বে মিনিবাসের চালককে গ্রেফতার, মৃতের পরিবারের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও ব্যস্ত সময়ে মিনিবাসের গতি নিয়ন্ত্রণের দাবি তুলে বেনাচিতি বাজারের প্রধান রাস্তা আনন্দগোপাল মুখোপাধ্যায় সরণি অবরোধ করা হয়। রাস্তার মাঝে খাটিয়া পেতে বিক্ষোভ শুরু হয়।

Advertisement

মৃতের আত্মীয়া রিনা সাউ বলেন, ‘‘সঞ্জয় ছটপুজো সেরে আমাদের জন্য জলখাবার আনতে বেরোয়। তার পরেই এই দুর্ঘটনা ঘটে।’’ স্থানীয় বাসিন্দা অরবিন্দ ওঝা দাবি করেন, ‘‘সঞ্জয় মোটরবাইক নিয়ে রাস্তার এক ধারে দাঁড়িয়েছিলেন। একটি মিনিবাস অন্য একটি মিনিবাসকে ওভারটেক করে ভুল দিকে ঢুকে ওকে ধাক্কা মারে।’’ প্রতিবেশীরা জানান, বাড়িতে সঞ্জয়ের বয়স্ক মা এবং ভাই-বোন রয়েছেন। ওই পরিবারকে উপযুক্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে বলে দাবি বাসিন্দাদের।

এ-জোন ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু অবরোধ চলাকালীন আচমকা মুখে রুমাল ঢাকা কয়েকজন প্রান্তিকা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গোটা পাঁচেক মিনিবাসে ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ। মিনিবাসের কর্মী মধুসূদন গড়াইয়ের অভিযোগ, ‘‘যাত্রী নিয়ে স্ট্যান্ড থেকে বাস নিয়ে বেরোচ্ছিলাম। কয়েকজন এসে দাঁড়াতে বলল। এর পরেই দুমদাম ভাঙচুর শুরু হল। এক জন চালককে নামিয়ে মারধরও করা হয়।’’ মিনিবাস কর্মী সংগঠনের নেতা কেতন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘মৃতের পরিবারের প্রতি আমাদের সহানুভূতি রয়েছে। ঘটনার জন্য আমরা দুঃখপ্রকাশ করছি। কিন্তু এ ভাবে বাস ভাঙচুর, কর্মীদের হেনস্থা করা ঠিক নয়।’’ এর প্রতিবাদে পরিবেষা বন্ধ করে দেন বাসকর্মীরা।

অবরোধের জেরে বাজার বন্ধ ও মিনিবাস পরিষেবা স্তব্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষজন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের বড় বাহিনী মোতায়েন করা হয় এলাকায়। পুলিশের তরফে অবরোধকারীদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা হয়। কিন্তু অবরোধকারীরা অভিযোগ করেন, মিনিবাসের মালিকদের পক্ষ থেকে সামান্য অর্থের বিনিময়ে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে বলা হয়েছে। তা তাঁরা মানবেন না। মিনিবাস মালিকদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে পুলিশ। এমন পরিস্থিতিতে ফের স্টিল মার্কেট লাগোয়া এলাকায় কয়েকটি মিনিবাসে ফের ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ। তাতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বাসের মালিকেরা। পুলিশ মাইকে পরিস্থিতি শান্ত করা এবং দ্রুত অবরোধ তোলার আর্জি জানালেও ফল হয়নি।

দুর্ঘটনার পরে ঘণ্টা সাতেক কেটে গেলেও পরিস্থিতি না পাল্টানোয় বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ লাঠি উঁচিয়ে বিক্ষোভকারীদের তাড়া করে পুলিশ। ফাঁকা করে দেওয়া হয় এলাকা। এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, পুলিশ লাঠি চালিয়েছে। যদিও পুলিশ তা মানতে চায়নি। মৃতের কয়েকজন পরিজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement