প্রতীকী ছবি।
মায়ের দেহ কাঁধে নিয়ে হেঁটে চলেছেন রামপ্রসাদ দেওয়ান। বৃহস্পতিবার এই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল চত্বরে। রামপ্রসাদের অভিযোগ ছিল, বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য তিন হাজার টাকা চাওয়া হয়েছিল। তিনি তা দিতে পারেননি। হাসপাতাল কর্মীদেরকাছে চেয়েও দেহ নিয়ে যাওয়ার গাড়ি পাওয়া যায়নি। ফের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ। এ বারের ঘটনাস্থল, আসানসোল জেলা হাসপাতাল। শুক্রবার পশ্চিম বর্ধমানের হিরাপুরের বাসিন্দা শুভ সূত্রধরের সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে অভিযোগ, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ফাল্গুনীর জন্য অ্যাম্বুল্যান্স পেতে সরকারের ‘টোল-ফ্রি’ নম্বর ১০২-এ বার পনেরো ফোন করেও লাভ হয়নি। অবশেষে, স্ত্রীকে মোটরবাইকে চাপিয়ে হাসপাতালে পৌঁছন তিনি।
এ দিন দুপুরে হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে শুভ সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছিলেন। তিনি জানান, স্ত্রী ন’মাসের অন্তঃসত্ত্বা। প্রসব বেদনা ওঠে এ দিন। শুভর অভিযোগ, “সকাল ১১টার পর পর প্রায় ১৫ বার ১০২ নম্বরে ফোন করি। প্রায় প্রতি বারই নম্বরটি ব্যস্ত ছিল। এক-দু’বার বলা হয়, ‘অ্যাম্বুল্যান্স নেই, ব্যস্ত আছে’।” তাঁর সংযোজন: “অবশেষে বিপদ বুঝে স্ত্রীকে ওই অবস্থাতেই মোটরবাইকে চাপিয়ে সাত কিলোমিটার দূরে হাসপাতালে আসি। স্ত্রীকে ঠিক সময়ে আনতে পেরেছি হাসপাতালে, এই অনেক।” হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শুভর স্ত্রীকে নির্দিষ্ট ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরিষেবাও দেওয়া হচ্ছে। তাঁর শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। যদিও, রাত পর্যন্ত ফোন করে এমন ‘হয়রানি’র বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়েরকরেননি শুভ।
তবে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরেই, সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সংশ্লিষ্ট মহলে। হাসপাতাল সূত্রে দাবি, ১০২ নম্বরে ফোন করে অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি রাজ্যের স্বাস্থ্য ভবন থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। এই নম্বরে ফোন করে আসানসোল জেলা হাসপাতাল থেকে পরিষেবা দেওয়া হয় চারটি অ্যাম্বুল্যান্সের মাধ্যমে। ঘটনা প্রসঙ্গে, হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাস বলেন, “১০২ নম্বরে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা পেতে সাধারণ মানুষ ফোন করে থাকেন। ওই ব্যক্তি বার বার ফোন করেও কেন অ্যাম্বুল্যান্স পেলেন না, সে বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি।” ঘটনাটির কথা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) শেখ মহম্মদ ইউনুস। তাঁর কথায়, “নির্দিষ্ট ভাবে লিখিত অভিযোগ পেলে আমি অবশ্যই তদন্ত করব।” এ দিকে, ১০২ নম্বরের রাজ্যের চিফ অপারেটিং অফিসার বিকাশ দাস বলেন, “সাত বার ফোন এসেছিল। আমরা অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্স ব্যস্ত থাকায় উনি পরিষেবা পাননি। এ জন্য আমরা দুঃখিত।”তাঁর আশ্বাস, হাসপাতাল থেকে ফাল্গুনীর বাড়ি ফেরার বিষয়ে যাবতীয় ব্যবস্থা তাঁরাই করবেন।
পাশাপাশি, বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। আসানসোল দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের অভিযোগ, “১০২ নম্বর ও মাতৃযানের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা নিয়ে বঞ্চনার অভিযোগ নতুন নয়। এ নিয়ে অতীতেও অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা। গরিব মানুষ সমস্যায় পড়লে সরকারি হাসপাতালেই যান। পরিষেবার এই হাল হলে, তাঁরা কোথায় যাবেন?”যদিও, তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসনের দাবি, “এটি যদি হয়ে থাকে, তবে তা বিক্ষিপ্ত ঘটনা। চিকিৎসা পরিষেবাউন্নত করতে রাজ্য সরকার আসানসোলে মাল্টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়ে তুলেছে।”