পদযাত্রায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দুর্গাপুরের বেনাচিতি বাজারে। ছবি: বিকাশ মশান।
নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে কেউ প্রণাম করলেন, কেউ ছুঁতে চাইলেন হাত। মঙ্গলবার দুর্গাপুরে পদযাত্রার ফাঁকে এমন অনেকেরই আবদার মেটালেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায় সভা সেরে এ দিন বিকেলে তাঁর হেলিকপ্টার নামে বেনাচিতি লাগোয়া স্কুলের কাছে। সেখান থেকে গাড়িতে বেনাচিতির পাঁচ মাথার মোড়ে পৌঁছন মমতা। বিকেল ৫টা ১০ মিনিট নাগাদ শুরু হয় পদযাত্রা।
দেখা গেল, একশো মিটার এগোতে না এগোতেই এক যুবক নিরাপত্তাবেষ্টনী পেরিয়ে এসে মুখ্যমন্ত্রীর পা ছুঁয়ে প্রণাম করলেন। আর একটু এগোতেই ঢুকে পড়ল একটি ছোট্ট মেয়ে। রক্ষীরা দ্রুত তাকে সরিয়ে দিলেও মুখ্যমন্ত্রী মেয়েটির পরিজনের সঙ্গে কথা বলেন। এ ভাবেই থামতে থামতে এগোল পদযাত্রা। ভিড়িঙ্গি মোড় পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিমি রাস্তা যেতেই সময় লাগল ঘণ্টাখানেক। পথে মমতার হাতে পুষ্পস্তবক ও উত্তরীয় দিয়ে সংবর্ধনা জানান দুর্গাপুর চেম্বার অব কমার্সের তরফে হরপ্রসাদ ঘোষাল। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এসেছিলেন বেনাচিতিতে। ব্যবসায়ীদের তরফে সংবর্ধনা দিয়েছি।’’
দুর্গাপুর স্টিল প্লান্ট গড়ার সময় গোপালমাঠ ও লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা জমি দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা বর্তমানে যে জমিতে বাস করেন তার দলিল নেই। ফলে ব্যাঙ্ক ঋণ সহ নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত তাঁরা। ভূমিরক্ষা কমিটি সেই কারণে আন্দোলন করছে। গোপালমাঠ থেকে কমিটির সদস্যরা পদযাত্রা করে নবান্ন পর্যন্ত গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। সে দিন দেখা পাননি। এ দিন কমিটির তরফে ধ্রুবজ্যোতি মুখোপাধ্যায়, সুমন গোপ’রা মুখ্যমন্ত্রীর হাতে জমির দলিল-এর আবেদনপত্র দিতে যান। মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আসায় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে তাঁদের কাছে পাঠান। বাবুলের হাতে আবেদন পত্র ও মুখ্যমন্ত্রীর জন্য উপহার হিসেবে মূর্তি তুলে দেওয়া হয়। ধ্রুবজ্যোতি বলেন, ‘‘আমরা আপ্লুত। আমাদের ব্যানার দেখেই মুখ্যমন্ত্রী থমকে দাঁড়ান এবং মন্ত্রীকে আমাদের কাছে পাঠান।’’
এ দিন পদযাত্রায় ছিলেন মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার, বাবুল সুপ্রিয়, জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, প্রাক্তন বিধায়ক অপূর্ব মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা বলয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছিল এলাকা। প্রতিটি উঁচু বাড়ির ছাদে সিভিক ভলান্টিয়ারদের নজরদারি ছিল। গোটা রাস্তার দু’ধারে ছিল উৎসুক মানুষের ভিড়। রাস্তার ধারের প্রতিটি বাড়ির বারান্দাও ছিল ভিড়ে ঠাসা। নরেন্দ্রনাথের মন্তব্য, ‘‘দুর্গাপুরে মুখ্যমন্ত্রীর পদযাত্রায় প্রতিবারই বিপুল ভিড় ও উচ্ছ্বাস দেখা যায়।’’ যদিও বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক তথা দুর্গাপুর পশ্চিমের বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের কটাক্ষ, ‘‘বাইরে থেকে গাড়ি, বাসে লোক আনা হয়েছিল। ভোটের ফলাফলে তা প্রমাণ হয়ে যাবে।’’