দুর্ঘটনার পরে। নিজস্ব চিত্র।
উড়ালপুল থেকে নামার মুখে পাথরের গুঁড়োবোঝাই ডাম্পারটি ধাক্কা মারে সামনের প্রাকৃতিক গ্যাসের ট্যাঙ্কারকে। সেটি গিয়ে ধাক্কা মারে এসবিসিএসটিসি-র একটি বাসে। আর তাদের মাঝে পড়ে বেঘোরে প্রাণ হারালেন এক মোটরবাইক চালক। জখম হয়েছেন ডাম্পারটির চালক-সহ দু’জন। তাঁরা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।
বুধবার সকাল ৯টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপরে বর্ধমানের মিরছোবা এলাকায় কলকাতামুখী লেনে। ঘটনার পরেই দীর্ঘক্ষণ সার্ভিস লেন ও কলকাতামুখী লেনে যান চলাচল বন্ধ ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত ভবতোষ সরখেলের (৬০) বাড়ি বর্ধমান শহরের টিকরহাটে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এই এলাকায় বছরে একবার বড় দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। তাছাড়া প্রতি মাসেই ছোটখাটো দুর্ঘটনা হয়। উড়ালপুলের মুখে রাস্তা পারাপার বন্ধেরও দাবি তুলেছেন তাঁরা।
বর্ধমান থানা ও দমকল জানিয়েছে, দুর্ঘটনার মুখে পড়ে আটকে গিয়েছিল ডাম্পার ও প্রাকৃতিক গ্যাসের গাড়ি দু’টির সামনের অংশ। গ্যাস কাটার দিয়ে কেটে গাড়িগুলিকে আলাদা করার পরে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। ডিএসপি (হেড কোয়ার্টার) অতনু ঘোষাল বলেন, “চালক বেপরোয়া ভাবে ডাম্পারটি চালাচ্ছিলেন। সেই কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রামমুদি কলোনি থেকে উল্টো দিকের হিমঘর ও শহরের ভিতরে যাওয়ার জন্য প্রচুর লোক দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপর দিয়ে যাতায়াত করেন। তেলিপুকুর উড়ালপুলের মুখে এই যাতায়াতের ফলে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। বেশ কয়েকবার স্থানীয়রা রাস্তা অবরোধ করেন। গত মে মাসে ট্রাকের ধাক্কায় ওই এলাকায় মারা যান এক চালকল শ্রমিক। তারও কয়েক মাস আগে, ওই জায়গায় মোটর ভ্যানের সঙ্গে ট্রাকের ধাক্কায় গলসির বড়দিঘি এলাকার তিনজন মারা যান। পরপর তিনটি গাড়ির ধাক্কায় তেলের কন্টেনার ভেঙে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে ওই রাস্তায়। তেল পড়ে বন্ধ হয়েছে যাতায়াত।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, এ দিন মোটরবাইক চালক নিয়ম মেনেই কলকাতামুখী লেন ধরে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ উড়ালপুল থেকে নেমে ডাম্পারটি ওভারটেক করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গোঁত্তা মেরে প্রাকৃতিক গ্যাসের গাড়িটিকে ধাক্কা মারে। সেটি ধাক্কা মারে বাসে। বাসটি সামলে নিয়ে চলে গেলেও প্রাকৃতিক গ্যাসের গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে ১০০ ফুট মতো ছিঁচড়ে মোটরবাইক চালককে ধাক্কা মেরে সার্ভিস লেনে ঢুকে পড়ে। গ্যাসের গাড়ির সামনের অংশ উল্টে যায়। ডাম্পারটিও আটকে যায়। সেখানেই মোটরবাইক নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন রামমুদি কলোনীর দেবাশিস রায়। তিনি বলেন, “আওয়াজ শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি, গ্যাসের গাড়িটি আমার দিকেই ছিঁচড়ে আসছে। মোটরবাইক ফেলে পাশের ঝোঁপে লাফাই। মোটরবাইকটির ক্ষতি হয়েছে। আমারও লেগেছে।”