আহত শ্রমিকেরা। নিজস্ব চিত্র।
সকাল থেকেই আলু বার করা, ঝাড়া-বাছার কাজ চলছিল হিমঘরে। আচমকা বিকট শব্দে ধোঁয়ায় ভরে যায় চারিদিক। ঝাঁঝালো গন্ধে অসুস্থ হয়ে পড়েন পাশের শ্রমিক আবাসনে থাকা কয়েকজন। ছোটাছুটি শুরু হয়ে হিমঘরে। পরে জানা যায়, একটি কনডেন্সরের ভাল্ভ ফেটে অ্যামোনিয়া গ্যাস বার হওয়াতেই ওই বিপত্তি। আধ ঘণ্টার চেষ্টায় মঙ্গলকোটের চানক পঞ্চায়েত এলাকার রামনগরের ওই হিমঘরের কর্মীরাই ভাঙা অংশ মেরামত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। শুক্রবার দুপুরের দিকে হিমঘরটি বন্ধ করে দেয় পুলিশ। অসুস্থ ন’জনকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে চার জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁদের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে পাঠানো হয়েছে। অসুস্থেরা প্রত্যেকেই উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৪ সালে ২-বি জাতীয় সড়কের ধারে পাঁচ লক্ষ ৮০ হাজার প্যাকেট আলু রাখার ক্ষমতাসম্পন্ন বেসরকারি হিমঘরটি তৈরি হয়। বর্তমানে লক্ষাধিক আলুর প্যাকেট রয়েছে সেখানে। আহত পঞ্চানন প্রামাণিক, মদন মাটিয়া, বিশ্বজিৎ মুদিরা বলেন, ‘‘কাজ করছিলাম। হঠাৎ ভাল্ভ ফেটে গ্যাস বেরোতে শুরু করে। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট, বমি শুরু হয় আমাদের।’’ জানা গিয়েছে, সেই সময়ে শ্রমিক আবাসনে জনা দশেক কর্মী ছিলেন। পাঁচ-ছ’জন বেরোতে পারলেও বাকিরা ঘরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। হিমঘর লাগোয়া মাঠে ধান কাটার কাজ করছিলেন অনেকে। ভাল্ভ ফাটার আওয়াজ ও গ্যাসের গন্ধে তাঁরাও ছোটাছুটি শুরু করেন। আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায়। পরে মঙ্গলকোট থানা ও গুসকরা ফাঁড়ির পুলিশ গিয়ে অসুস্থদের গুসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠায়।
হিমঘরের কর্মী হৃদয় মণ্ডল বলেন, ‘‘অন্য দিনের মতই কাজ চলছিল। হঠাৎ বিকট আওয়াজ আর ঝাঁঝালো গন্ধে চোখ জ্বালা করতে শুরু করে। প্রথমে ছুটে বাইরে চলে যাই। পরে মেরামতির কাজে হাত লাগাই।’’ আর এক কর্মী মিলন পালের দাবি, ওই কনডেন্সরের পাশের গাছের পাতা, ঘাস সব ঝলসে গিয়েছে। বেশ কিছু কীটপতঙ্গ মারা গিয়েছে। হিমঘরের যন্ত্রাংশের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসীর একাংশ। এই ঘটনা রাতে ঘটলে অনেকের প্রাণহানি হতে পারত, দাবি তাঁদের। যদিও হিমঘর কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রতি ছ’মাসে যন্ত্রাংশ ঠিক আছে কি না, তা পরীক্ষা করে সরকার অনুমোদিত একটি সংস্থা। অগস্টে শেষ পরীক্ষা হয়েছে বলেও জানান তাঁরা। গ্যাস চেম্বারের পাশে শ্রমিকদের আবাসন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কর্মীদের একাংশ। হিমঘর মালিক সুশীল মণ্ডল সেটি সরানোর আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘চেম্বার থেকে যে পাইপ লাইনের সাহায্যে অ্যামোনিয়া গ্যাস যায়, সেখানে একটি ভাল্ভ ফেটেছে। তবে কী কারণে এই ঘটনা, বুঝতে পারছি না। যাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তাঁদের চিকিৎসার দায়িত্ব হিমঘর কর্তৃপক্ষের।’’
মহকুমাশাসক (কাটোয়া) প্রশান্তরাজ শুক্ল জানান, কী ভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি, এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য অন্য হিমঘরগুলিকে সতর্ক করা হবে। মেরামতের পরে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে শংসাপত্র মিললে হিমঘরটি ফের খুলে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।