এ বার গন্তব্য বাংলাদেশ

দূষণ মুক্ত পৃথিবীর স্বপ্ন ফেরি সাইকেলে

তিনি স্বপ্ন দেখেন দূষণমুক্ত পৃথিবীর। তবে ঘরের কোণে বসে বসে শুধু স্বপ্ন দেখেই চুপ করে থাকার মানুষ তিনি নন। বরং মানুষের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে তিনি ছুটে যান দেশে-দেশান্তরে। এ বার গন্তব্য বাংলাদেশ। সঙ্গী একটা সাইকেল।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কালনা শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৬ ০১:১৪
Share:

তৈরি কাঙালি মণ্ডল। ছবি: মধুমিতা মজুমদার।

তিনি স্বপ্ন দেখেন দূষণমুক্ত পৃথিবীর। তবে ঘরের কোণে বসে বসে শুধু স্বপ্ন দেখেই চুপ করে থাকার মানুষ তিনি নন। বরং মানুষের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে তিনি ছুটে যান দেশে-দেশান্তরে। এ বার গন্তব্য বাংলাদেশ। সঙ্গী একটা সাইকেল। তিনি কালনার কাঁকুড়িয়া পঞ্চায়েতের মুরাগাছা গ্রামের চাষি ৭৬ বছরের যুবক কাঙালি মণ্ডল।

Advertisement

কালনা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে মুরাগাছা গ্রামটি। সেখানেই ছোট্ট বাড়িতে স্ত্রী আর তিন ছেলের সঙ্গে থাকেন পেশায় চাষি কাঙালি। লাল রঙের সাইকেলে ঝাড়পোঁছ করতে করতেই গল্প জোড়েন কাঙালি। কথা প্রসঙ্গে জানা যায়, নেশাটা ধরেছিল ১৯৯৮ সালে। দেশের বিভিন্ন রাজ্য ঘুরে ঘুরে ‘সবুজ পৃথিবী’র স্বপ্ন ফেরি করে বেড়ান কাঙালি। পাহাড়ের কোলে নেপাল, ভুটানেও প্রচার অভিযান চালিয়েছেন। একটানা তিন-চার বছর ধরে। শংসাও জুটেছে ঢের। বিভিন্ন রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী, দেশের বিভিন্ন জেলাশাসক, আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা— কোথা থেকে মেলেনি শংসা! ২০১৩ সাল পর্যন্ত লাগাতার প্রচার অভিযান চালিয়েছেন। মাঝখানে কয়েক বছরের ব্যবধান। ২০১৬-তেই ফের চাগাড় দেয় ‘সবুজ পৃথিবী’র স্বপ্নটা। প্রস্তুতি শুরু যায়। গন্তব্য বাংলাদেশ। সে দেশের ভিসাও মিলে গিয়েছে।

এখন পড়শি দেশে যাওয়ার তোড়জোড় কাঙালির বাড়িতে। কী কী নিচ্ছেন সঙ্গে? শুনেই মুচকি হেসে কাঙালি জানিয়ে দেন, থাকছে দু’সেট জামা-কাপড়, একটা বিছানার চাদর আর প্রচারের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ— বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার মানচিত্র। জামা দু’টির গায়েই লেখা থাকবে কাঙালির স্বপ্ন— ‘দুষণ মুক্ত পৃথিবী গড়ুন’। আজ, সোমবার যাত্রা শুরু। কৃষ্ণনগর, গেদে হয়ে বাংলাদেশে পৌঁছবেন।

Advertisement

এ বার তবে খানিকটা বেশি টাকা সঙ্গে নিচ্ছেন কাঙালি। কত? দু’হাজার টাকা। এই টাকায় দেশ ঘোরা যাবে তো? ‘‘আগে এত টাকা নিতাম না। বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষই থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থা করতেন’’, নাগাড়ে কথাগুলো বলে গেলেন কাঙালি। সঙ্গের সাইকেলটাও বছর আটেক আগে হুগলির বিপ্লব বসু ও শক্তি ভট্টাচার্য উপহার দিয়েছিলেন বলে জানান কাঙালি।

তবে কাঙালিকে নিয়ে বাড়ির মানুষটা এ বার খুব চিন্তায়। তাঁর স্ত্রী লুথফা বেগম বলেন, ‘‘অনেক তো বয়স হল। কী ভাবে একটা আস্ত দেশ ঘুরবেন উনি, ভেবেই খুব চিন্তা হচ্ছে।’’ চিন্তায় কাঙালির তিন ছেলেও। তবে কাঙালির সে সবে চিন্তায় সময় দেওয়ার অবসর নেই। পরিবারের লোকজন জানান, ২০০৭ সালে এক বার ভারী বিপদে পড়েছিলেন তিনি। কাশ্মীরে এক বার পাখি দেখার সময় পা হড়কে পড়ে যান কাঙালি। তবে মাস খানেক হাসপাতালে থেকেই প্যাডেলে পা দিতে দ্বিতীয়বার ভাবেননি কাঙালি।

গ্রামের বাসিন্দারা জানান, কাঙালি কিশোর বয়স থেকেই স্বপ্ন দেখতেন দূষণমুক্ত সবুজ পৃথিবীর। সেই স্বপ্নকে সাকার করতেই এমন প্রচার কাঙালির। তাই বোধহয় তিনি বলেন, ‘‘যত দিন বাঁচবো এ ভাবেই মানুষকে সচেতন করতে প্রচার চালিয়ে যাব।’’ বলতেই ধীরে ধীরে গাঁয়ের মেঠো পথ ধরে মিলিয়ে যেতে থাকে লাল রঙের সাইকেলটা।

গ্রামের মানুষ, পরিবারের সদস্যরাও হয়তো বুঝতে পারেন কাঙালির এ পথের ‘শেষ নাহি যে’।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement