এক দিকে সিন্ডিকেট, দুর্নীতিতে দাঁড়ি টানতে কড়া বার্তা দিচ্ছেন দলনেত্রী। পরপর বৈঠকে নেতাদের হুঁশিয়ারিও দিচ্ছেন। তার মধ্যেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠল দলের কেতুগ্রাম ২ ব্লক সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে।
দলেরই সাত অঞ্চল সভাপতি দেবাশিস মণ্ডল নামে ওই নেতার বিরুদ্ধে তোলাবাজি, ঠিকাদারদের নিয়ে সিন্ডিকেট চালানোর একগুচ্ছ অভিযোগ তোলেন। তাঁদের দাবি, স্থানীয় বিধায়ক, দলের জেলা পর্যবেক্ষক এমনকী দলনেত্রীকেও লিখিত ভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন তাঁরা। যদিও দেবাশিসবাবুর দাবি, অভিযোগ মিথ্যে। উল্টে বিধায়ক ঘনিষ্ঠ লোকজনের জন্য এলাকায় দলের ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।
কেতুগ্রাম ২ ব্লকের কেতুগ্রাম অঞ্চল সভাপতি সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, মৌগ্রাম অঞ্চল সভাপতি পার্থপ্রতিম চট্টোপাধ্যায়, বিল্লেশ্বর অঞ্চল সভাপতি সুবীর পাল, সীতাহাটি অঞ্চল মদনমোহন পাল-সহ তৃণমূলের সাত জন আলাদা চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকে দেবাশিসবাবু এলাকায় তোলাবাজি শুরু করেছেন। অঞ্চল সভাপতিদের মোটা অঙ্কের টাকা চেয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, পঞ্চায়েত সমিতির অফিসে বসে তিনি ঠিকাদারি-সিন্ডিকেট চালাচ্ছেন বলেও তাঁদের অভিযোগ। এমনকী, স্থানীয় বিডিও এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে দেবাশিসবাবুর বিরাগভাজন হয়েছেন। ওই সাত নেতার আরও অভিযোগ, কেতুগ্রামের বিল্লেশ্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের চরখিতে বেআইনি বালি ব্যবসায় দেবাশিসবাবু কয়েকজনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। বেশ কয়েক বছর ধরে ব্লক সভাপতি গ্রাম ছেড়ে কাটোয়া শহরে থাকায় পঞ্চায়েত স্তরে কোনও যোগাযোগ হচ্ছে না বলেও তাঁদের দাবি। এতে দলের তো বটেই প্রশাসনিক কাজকর্মও ব্যাহত হচ্ছে।
তৃণমূল পরিচালিত মৌগ্রাম পঞ্চায়েতের ছয় সদস্যেরও অভিযোগ, “ভাগীরথীর তীরে কল্যাণপুর, উদ্ধারণপুর ও শাঁখাই ফেরিঘাট সংস্কারের সময় বেআইনি আর্থিক লেনদেন করে ঠিকাদারকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গত বন্যায় মৌগ্রাম এলাকায় তিনটি নৌকা ব্যবহার করা হয়েছিল। অথচ ৩৬টি নৌকা ব্যবহার করা হয়েছে বলে দেবাশিসবাবু মাস্টার রোলে টাকা তুলেছেন।” তাঁদের আরও অভিযোগ, গত আর্থিক বছরে পঞ্চায়েত সমিতি থেকে ১০০ দিনের কাজ করার নামে ভুয়ো মাস্টার রোলে প্রায় কোটি টাকা তোলা হয়েছে। কিন্তু এলাকার মানুষ ১০০ দিনের কাজ পাননি। বিরোধী দলের নেতার সঙ্গে ব্লক সভাপতির প্রত্যক্ষ ভাবে ‘যোগাযোগ’ থাকায় বিধানসভা নির্বাচনে কেতুগ্রাম ২ ব্লকে তৃণমূলের ফল আশানুরূপ হয়নি বলেও তাঁদের দাবি। ব্লক সভাপতি বদলেরও দাবি তুলেছেন তাঁরা। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিধায়কও এ ব্যাপারে পর্যবেক্ষকের কাছে বিশদে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে কংগ্রেসের নেতা হিসেবে বর্তমান বিধায়কের নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন দেবাশিসবাবু। তখন কেতুগ্রাম ২ ব্লক সভাপতি ছিলেন বিকাশ মজুমদার। ২০১২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ছোট রেলে ধর্ষণের ঘটনার সময় মহিলাকে ‘সাহায্য’ করায় তাঁর পদ খোওয়া যায়। রাতারাতি বিধায়ক-ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে ওই পদে বসেন দেবাশিসবাবু।
দেবাশিসবাবুর দাবি, “কেতুগ্রাম ১ ব্লকের কান্দরা সদরে বিধায়কের নেতৃত্বে একটি বৈঠক হয়। সেখানেই আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করার জন্য অঞ্চল সভাপতিদের চাপ দেওয়া হয়। তার মধ্যে তিন অঞ্চল সভাপতিকে আমি মনোনয়ন করিনি। আসলে বিধায়ক-ঘনিষ্ঠ এক জনের অরাজকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্যই মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।”
বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ অবশ্য বলেন, “দেবাশিসের কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি বিন্দুবিসর্গ জানি না। তবে দেবাশিসের বিরুদ্ধে চিঠি পেয়েছি।” দলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোট ও আউশগ্রামের পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “বিষয়টি দেখছি। পরে মন্তব্য করব।”