দু’দিকে দুই নির্দল কাউন্সিলর। মাঝে উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। এই ‘সাক্ষাৎ’ ঘিরেই বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র।
ভোটের আগে তৃণমূলের তরফে বার বার বার্তা দেওয়া হয়েছিল, দলের কোনও নেতা-কর্মী নির্দল হিসাবে জিতলে বা দলের প্রার্থীকে কোনও নির্দল প্রার্থী হারিয়ে দিলেও, সংশ্লিষ্ট নির্দলদের দলে নেওয়ার কথা ভাবা হবে না। কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলেরই একটি সূত্রের দাবি, আসানসোল পুরভোটের ফলপ্রকাশের পরেই দলের জেলা চেয়ারম্যান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’ দেখা যাচ্ছে ৬৫ ও ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের দুই জয়ী নির্দল যথাক্রমে নাদিম আখতার ও টুম্পা চৌধুরীর।
দলের নির্দেশ অমান্য করে কুলটির সাতটি ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছিলেন প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র-সহ ন’জন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল সদস্য। নানা পন্থা নিয়েও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক থেকে দলের জেলা সভাপতি বিধান উপাধ্যায়, সবাই বার্তা দেন, দলের কোনও নেতা-কর্মী নির্দল হিসাবে জিতলে বা দলের প্রার্থীকে কোনও নির্দল প্রার্থী হারিয়ে দিলেও, সংশ্লিষ্ট নির্দলদের দলে নেওয়ার কথা ভাবা হবে না।
কিন্তু তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, গত বৃহস্পতিবার দুই জয়ী নির্দল নাদিম ও টুম্পা উজ্জ্বলের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে মালা পরিয়ে মিষ্টিমুখও করান। ঘটনাচক্রে, নাদিম ‘বিক্ষুব্ধ’ তৃণমূল এবং টুম্পা ‘প্রকৃত অর্থেই নির্দল’ হিসাবে এলাকায় পরিচিত। সাক্ষাতের পরে টুম্পা প্রকাশ্যেই বলেন, “উজ্জ্বলদা আমাকে কিছু দিনের মধ্যেই তৃণমূলে যোগ দেওয়ানোর বিষয়ে কথা দিয়েছেন। আমি তৃণমূলের হয়েই কাজ করতে চাই।” নাদিমও বলেন, “অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি, উজ্জ্বলদাকে আমার পাশে থাকার অনুরোধ করেছি। তৃণঋঃঋমূল চাইলে আমি দলে ফিরে কাজ করতে চাই।”
কিন্তু ভোটের আগে দল নির্দিষ্ট ভাবে ‘নির্দল-নীতি’র কথা বললেও কেন ওই ‘সাক্ষাৎ’, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে তৃণমূলের অন্দরে। ৬৫ ও ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের দুই পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী যথাক্রমে আখতার হুসেন এবং বেবি বাউড়ি প্রকাশ্যেই বলেন, “নির্দিষ্ট প্রমাণ-সহ এ বিষয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ পাঠিয়েছি। আশা করি ব্যবস্থা হবে।” দলের অন্দরে ‘উজ্জ্বল-বিরোধী’ হিসাবেই পরিচিত, তৃণমূলের কুলটি ব্লক সভাপতি বিমান আচার্যও বলেন, “এটা এক ধরনের দ্বিচারিতা। দলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিষোদগার করে যাঁরা দলের প্রার্থীদের হারিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠতা স্থাপন করে দলের ক্ষতি করছেন উজ্জ্বল।” তবে পুরো বিষয়টিকে ‘নেহাতই সৌজন্য’ বলে দাবি করেছে উজ্জ্বল। তাঁর আরও সংযোজন: “কেউ যদি আমাকে এসে অভিনন্দন জানান, আমি কী বলব। আমি কাউকেই দলে নেওয়ার বিষয়ে কথা দিইনি। এটা দলীয় নেতৃত্ব ঠিক করবেন।” যদিও বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন জেলা ও রাজ্যের তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিধান উপাধ্যায় বলেন, “আমি এ নিয়ে খোঁজ নেব।” তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন বলেন, “এ নিয়ে আমার কিছু জানা নেই।”