কুলটিতে তৈরি জলপ্রকল্প। ছবি: পাপন চৌধুরী
বিধানসভা ভোটের প্রচারে এসে কুলটির জন্য নতুন জলপ্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চার বছরের মাথায় সেটির উদ্বোধন করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুরে প্রশাসনিক বৈঠকের মঞ্চ থেকে তা উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। প্রায় তেরো বছরের প্রতীক্ষা শেষ হতে চলেছে কুলটিবাসীর।
কুলটিতে পানীয় জলের সমস্যা বহু বছরের। বিভিন্ন ভোটে প্রচারে নানা পক্ষ এলাকায় এই সমস্যাকেই হাতিয়ার করেছে। সঙ্কট কাটাতে ২০০৬ সালে একটি প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করে সাবেক কুলটি পুরবোর্ড। প্রকল্পের খরচ ধরা হয় ১৩৯ কোটি টাকা। কেন্দ্রের তৎকালীন ইউপিএ সরকার জেএনইউআরএম প্রকল্পে অর্থ অনুমোদনও করে। প্রকল্প দেখভালের জন্য আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদকে (এডিডিএ) ‘নোডাল এজেন্ট’ করে কেন্দ্র। এর পরেই প্রকল্প তৈরি নিয়ে বিবাদ শুরু হয় তৃণমূল পরিচালিত কুলটি পুরবোর্ড এবং সিপিএম পরিচালিত এডিডিএ-র বোর্ডের মধ্যে। তা না মেটায় প্রকল্প আর রূপায়িত হয়নি। টাকা ফেরত যায়।
২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। ২০১৫ সালে আসানসোল, কুলটি, রানিগঞ্জ ও জামুড়িয়া পুরসভাকে সংযুক্ত করে একটি পুরসভা তৈরি হয়। ভোটে জিতে সেই আসানসোল পুরসভায় বোর্ড গড়ে তৃণমূল। তার পরের বছরেই বিধানসভা ভোটের প্রচারে কুলটিতে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই এলাকার জন্য নতুন একটি জলপ্রকল্প তৈরির কথা জানান।
আসানসোল পুর কর্তৃপক্ষ জানান, অবশেষে সেই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রের ‘আমরুত’ প্রকল্পে অর্থ সাহায্য করা হয়েছে এই জলপ্রকল্পের জন্য। উপকৃত হবেন কুলটির অন্তর্গত ২৮টি ওয়ার্ডের প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ বাসিন্দা। পুরসভার জল দফতরের মেয়র পারিষদ পূর্ণশশী রায় জানান, জলের সংযোগ নিতে এককালীন তিন হাজার টাকা জমা দিতে হবে। জলের মিটার বসানো হবে। পরিবার পিছু ৩০০ লিটার জল বিনামূল্যে মিলবে। তার বেশি জল খরচ করলে দাম দিতে হবে। এলাকার সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলগুলি বিনামূল্যে জল পাবে।
প্রকল্পের উদ্বোধন নিয়ে অবশ্য রাজনৈতিক চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্র এই প্রকল্পের জন্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা দিয়েছে। অথচ, পুরসভা তা উল্লেখ করছে না। পুরোটাই নিজেদের কৃতিত্ব বলে দাবি করছে!’’ আসানসোলের মেয়র তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারি পাল্টা দাবি করেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছায় রাজ্য সরকারের টাকায় এই প্রকল্প তৈরি হচ্ছে। বিজেপি গায়ে পড়ে কৃতিত্ব নিতে চাইছে।’’