নিজস্ব চিত্র।
বাঁকুড়ার শিশুপাচার-কাণ্ডকে ঘিরে এ বার শুরু হল শাসক বনাম বিরোধী রাজনৈতিক তরজা। জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত অধ্যক্ষ কমলকুমার রাজোরিয়ার কঠোর শাস্তির দাবি তুলে বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার রাস্তায় নামল তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠন। অধ্যক্ষের সঙ্গে বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকারের ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তুলেছে তারা। একই সঙ্গে সাংসদের পদত্যাগেরও দাবি তুলেছে শিক্ষক সংগঠন। পাল্টা সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছে বিজেপি। বিজেপি-র অভিযোগ, এই ঘটনাকে নিয়ে রাজনীতি করছে তৃণমূল।
শিশুপাচারের ওই ঘটনা সামনে আসার পরই গ্রেফতার হন জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ। তাঁর কঠোর শাস্তির দাবি তুলে আগেই সরব হয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। এ বার সেই তালিকায় নাম লেখাল রাজ্যের শাসক দলের শিক্ষক সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি । বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই শিক্ষক সংগঠনের তরফে অধ্যক্ষের শাস্তির দাবিতে বাঁকুড়া শহরে মিছিল করা হয়। বিক্ষোভ দেখানো হয় বাঁকুড়া জেলা শিক্ষা দফতরের ডিআই এবং জেলা শাসকের দফতরেও।
রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা সভাপতি শ্যামল সাঁতরা বলেন, “জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত অধ্যক্ষ কমলকুমার রাজোরিয়াকে নানা সময় বিজেপি-র বিভিন্ন দলীয় অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে। একই দলীয় মঞ্চে থেকে অধ্যক্ষের সঙ্গে ছবিতে দেখা গিয়েছে বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদকে। স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনার দায় মাথায় নিয়ে সাংসদের পদত্যাগ করা উচিত। গোটা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আবেদন জানিয়েছি প্রশাসনের কাছে।”
সুভাষ পাল্টা বলেন, “তৃণমূল কী বলছে তা নিয়ে আমার কোনও মাথাব্যথা নেই। আমি অনেক আগেই পরিষ্কার ভাবে জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি, গোটা ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া দরকার। অপরাধীরা যাতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায় সে দিকে প্রশাসনের নজর দেওয়া দরকার।” বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়ক নিলাদ্রীশেখর দানা বলেন, “এ রাজ্যের পুলিশ এবং তদন্তকারী সংস্থার উপরে আমাদের আস্থা নেই। এই ঘটনার প্রকৃত তদন্তের জন্য প্রয়োজনে সিবিআইকে দায়িত্ব দেওয়া হোক। আমরা চাই তদন্তে প্রকৃত সত্য উঠে আসুক এবং প্রকৃত দোষী কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি পাক। এই ঘটনায় রাজনৈতিক চাপানউতর বন্ধ হওয়া দরকার। মানুষের নজর ঘোরানোর জন্যই সাংসদের দিকে আঙুল তোলা হচ্ছে।”
ইতিমধ্যেই শিশুপাচারের ঘটনায় আরও একধাপ এগিয়েছে বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশ। ঘটনায় উদ্ধার হওয়া পাঁচ শিশু সন্তানের মাতৃ পরিচয় নিশ্চিত করতে মা হিসাবে দাবি করা রিয়া বাদ্যকরের ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতি চেয়ে বাঁকুড়া জেলা আদালতে আবেদন জানিয়েছে পুলিশ। অধ্যক্ষ সম্পর্কে আরও তথ্য জোগাড়ের উদ্দেশ্যে বুধবার তাঁর স্ত্রী এবং ছেলে রাহুল রাজোরিয়াকে জিজ্ঞসাবাদ করেছেন তদন্তকারীরা। যদিও সূত্রের খবর, ওই দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তেমন কোনও নতুন তথ্য হাতে পাননি তদন্তকারীরা।