বংশীবদন বর্মণ।
কেন্দ্র ও রাজ্য— দু’পক্ষের বিরুদ্ধেই আক্রমণ শানিয়ে নতুন নাগরিকত্ব আইন বাতিলের দাবিতে বড় আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিলেন গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের নেতা বংশীবদন বর্মণ।
বুধবার কোচবিহারে রাসমেলার মাঠ থেকে মিছিল নিয়ে জেলাশাসকের দফতরের সামনে পৌঁছন বংশীবদন। জেলাশাসকের মাধ্যমে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মারকলিপিও দেন তাঁরা। সেখানেই তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী দু’জনকেই আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী গদি বাঁচানোর রাজনীতি করছেন। আমরা কোচবিহারের বাসিন্দারা আমাদের বক্তব্য তুলে ধরেছি। কোনও সদুত্তর না পেলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।” তিনি জানান, ভূমিপুত্র ঐক্যমঞ্চের পক্ষ থেকে খুব শীঘ্রই রাসমেলার মাঠে একটি জনসভা করা হবে। বংশীবদন এবং কেপিপি নেতা অতুল রায় মিলে ওই মঞ্চ গড়ে তুলেছেন।
কোচবিহারে গ্রেটারের ভূমিকা কী হয়, সেদিকে নজর ছিল সকলেরই। যদিও গ্রেটারের একাধিক গোষ্ঠী রয়েছে। তার মধ্যে বংশীবদন তৃণমূল সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তিনি রাজবংশী উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। রাজবংশী ভাষা অ্যাকাডেমির দায়িত্বেও রয়েছেন তিনি। বংশীবদন অবশ্য আগেই জানিয়েছেন, সরকার মনে করেছে বলেই তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছে। কিন্তু তিনি তাঁর আন্দোলনের জায়গা থেকে বিচ্যুত হবেন না।
এদিন ফের তেমনটাই তাঁর বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট করেন বংশীবদন। তাঁদের দাবি, ভারতভুক্তি চুক্তি অনুসারে কোচবিহারের বাসিন্দাদের মতামত ছাড়া কেন্দ্রীয় সরকার কোনও ভাবেই এই জেলায় নাগরিকত্ব আইন চালু করতে পারেন না। স্মারকলিপিতে সেই চুক্তির কিছু অংশ তুলে ধরা হয়। সেই সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের ছ’টি রাজ্যের মতোই কোচবিহারে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চকে ভিত্তিবর্ষ ধরে এনআরসি-র দাবি করেন তিনি।
কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের মাধ্যমে শরণার্থীদের দেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি ও সিএএ কার্যকর হতে দেবেন না তিনি। সেখানেই প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তিনি। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ বলেন, “যে কোনও সংগঠন তাদের কথা বলতেই পারে। কিন্তু নাগরিকত্ব সংশোধিত আইন করে দেশের মানুষকে বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। অসমে এনআরসি নিয়ে কী হল, তা সবাই জানেন। তাই মানুষ এসবের বিরুদ্ধে।”
বিজেপি’র কোচবিহার জেলা সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় চক্রবর্তী অভিযোগ করেন, তৃণমূলের ভাষাতেই কথা বলছেন বংশীবদন। তিনি বলেন, “কোচবিহারের ভারতভুক্তি চুক্তিতে এমন কিছু রয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। আর বংশীবদন বর্মণকে তৃণমূল সরকার একাধিক পদ দিয়ে রেখেছে। তাই তিনি আজ এমন কথা বলছেন।”