জ্বলছে বাংলাদেশ। —ফাইল ছবি।
দুশ্চিন্তা, দুশ্চিন্তা এবং দুশ্চিন্তা। বাংলাদেশ থেকে ভারতে পড়তে আসা ছাত্রছাত্রীরা এখন এই শব্দটির মধ্যেই বাস করছেন। দেশের কথা উঠলে কার্যত একটাই বাক্য বলছেন তাঁরা, “কোনও খবর পাচ্ছি না বাড়ির!”
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করছেন প্রাপ্তি সাহা। থাকেন বাংলাদেশের ফরিদপুরে। প্রাপ্তির কথায়, তাঁদের শহর ফরিদপুর আপাত ভাবে শান্ত। কিন্তু এ বারে সেই শহরও ছাত্র আন্দোলনের জেরে উত্তাল হয়ে উঠেছে। “জানেন, আমার ভাই কলেজ ছাত্র। কোনও খবরই পাচ্ছি না বাড়ির, ভাইয়ের...”, গলা ধরে আসে প্রাপ্তির।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পারেটিভ ইন্ডিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড লিটারেচারের বাংলাদেশি ছাত্র শামীম মাহমুদ ২০১৮ সালে ওই দেশে হওয়া ‘কোটা সংস্কার’ আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন। তখন পড়তেন ঢাকা কলেজে। এ দিন জানান, ওই আন্দোলনকে সমর্থন করার জন্য তাঁকে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে এসে হল থেকে বার করে দেওয়া হয়েছিল। এখনও এই আন্দোলনকে সমর্থন করেন শামীম।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র প্রসেনজিৎ ঘোষের বাড়ি ঢাকায়। তিনি বলছিলেন, “কাল (বৃহস্পতিবার) থেকে কত বার চেষ্টা করেছি বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলার। কিছুতেই পারছি না।” একই কথা মৌলানা আজাদ কলেজের অর্থনীতির ছাত্রী রিপা পালেরও। তিনি টাঙ্গাইলের বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার রাত ৮টা নাগাদ ফেসবুক মেসেঞ্জারে বাড়ির সঙ্গে কথা বলছিলেন। হঠাৎই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তার পর থেকে অনেক বার চেষ্টা করেও আর যোগাযোগ করতে পারেননি। রিপা বলছেন, “দেশে কী যে ঘটছে! খুব চিন্তায় আছি।”
বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় মোবাইল পরিষেবা এবং ইন্টারনেট বন্ধ থাকাতেই যে এই পরিস্থিতি, জানেন পড়ুয়ারা। কিন্তু মন যুক্তি মানতে চায় না। বিশ্বভারতীতে পড়তে আসা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অনেকেই সে কথা বলছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের ৪০-৫০ জন পড়ুয়া রয়েছেন। তাঁদের মধ্যেই এক ছাত্রী উদ্বেগ চেপে রাখতে না পেরে সমাজমাধ্যমে লিখেছেন যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকার কথা। সামনেই সিমেস্টারের পরীক্ষা। অথচ এই অবস্থায় অনেকেই পড়ায় মন বসাতে পারছেন না। সঙ্গীতভবনের বাংলাদেশি পড়ুয়া দীপা সাহা বলেন, “একের পর এক মৃত্যুর সংবাদ আসছে। পরিবার কী অবস্থায় রয়েছে, জানি না। কোনও খোঁজও পাচ্ছি না।” সঙ্গীতভবনেরই আর এক পড়ুয়া অমৃতা সরকার বলেন, “যোগাযোগই করতে পারছি না পরিবারের সঙ্গে। প্রচণ্ড দুশ্চিন্তা হচ্ছে।”
বাংলাদেশে হিংসার প্রতিবাদে এ দিন বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারা শান্তিনিকেতন ডাকঘরের সামনে মোমবাতি হাতে একটি শোকসভার আয়োজন করেন। সেখানে রবীন্দ্রনাথের গানের মধ্য দিয়ে তাঁরা এই হিংসার প্রতিবাদ জানান। সংঘর্ষে মৃত ছাত্রদের প্রতি শোকজ্ঞাপনে এক মিনিট নীরবতা পালনও করেন তাঁরা।