জলযানের সঙ্গে বাংলাদেশি বার্জের ধাক্কা লাগার পরে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলার কাছে। নিজস্ব চিত্র
শিপিং চ্যানেলে যাওয়ার কথাই নয় তার। তা সত্ত্বেও হুগলি নদীতে ভুল পথে ঢুকে পড়ে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের জলযানের ধাক্কায় ডুবে গেল একটি ছাইভর্তি বাংলাদেশি বার্জ।
বৃহস্পতিবার সকালে মহেশতলা থানা এলাকার উলুডাঙার ওই দুর্ঘটনায় বার্জের সব কর্মীকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের কয়েক জনের কমবেশি আঘাত লাগায় চিকিৎসারও ব্যবস্থা হয়। বাংলাদেশি বার্জ এ ভাবে ভুল পথে গেল কেন, কেন এমন সংঘর্ষ— পুরো বিষয়েই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা বন্দরের চেয়ারম্যান বিনীত কুমার। ছাইভর্তি বার্জ ডুবে যাওয়ায় নদীতে ভয়াবহ দূষণের আশঙ্কা রয়েছে। ডুবে যাওয়া বার্জের জ্বালানি তেল গঙ্গায় মিশলেও ক্ষতি হতে পারে। রাজ্য দূষণ পর্ষদের প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে গিয়ে জলের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এই দুর্ঘটনায় কোনও দূষণ হয়েছে কি না, ওই নমুনা বিশ্লেষণের পরে তা বোঝা যাবে।
বন্দর ও পুলিশি সূত্রের খবর, ‘মা মমতাময়ী’ নামে বার্জটি এ দিন সকালে বজবজ থেকে বাংলাদেশ যাচ্ছিল। ‘ডিভি রবীন্দ্র’ নামে বন্দরের জলযানটি শিপিং চ্যানেল বরাবর যাচ্ছিল জরুরি মেরামতির জন্য। তখনই বার্জ ও জলযানে ধাক্কা লাগে। একটি সূত্রের দাবি, জলযানটিকে দেখতে পাওয়ার পরে বার্জ থেকে ওয়্যারলেসে বার্তাও দেওয়া হয়। জাহাজটি কোনও রকমে বার্জটির পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বার্জের মাঝখানে ধাক্কা মারে।তাতে বার্জের মাঝখানের একটি অংশ ভেঙে যায়। ভাঙা অংশ দিয়ে জল ঢুকতে শুরু করে। জাহাজের ধাক্কায় বার্জটি ছিটকে আক্রা এলাকায় নদীর ধারে পৌঁছে যায়। ঘণ্টা দুয়েক পরে, জোয়ারের সময় সেটি ডুবে যায়। ওই বার্জে ১৩ জন নাবিক ছিলেন। সকলকেই উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। জাহাজের ধাক্কার জেরে কয়েক জন নাবিক চোট পান। তাদের চিকিৎসা করা হয়েছে বলে জানান ডায়মন্ড হারবার জেলার পুলিশকর্তারা।
বন্দর-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, শিপিং চ্যানেলে বাংলাদেশি বার্জের থাকার কথা নয়। কিন্তু বার্জটি সেই জায়গায় ছিল। এই সংঘর্ষে বন্দরের জলযানটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বার্জের মাস্টার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমার দূর থেকে জাহাজটিকে দেখতে পেয়ে রেডিয়ো বার্তা দিয়েছিলাম। আমাদের বার্জের গতি খুব কম। তাই তাড়াতাড়ি ডান দিকে চলে যাওয়া সম্ভব নয়। জাহাজটি প্রথমে কিছুটা ডান দিকে যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাদের বার্জে ধাক্কা মারে।’’ যদিও বার্জ ভুল পথে যাচ্ছিল কেন, তার কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারেননি নজরুল। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, বার্জের চালক সম্ভবত নদীপথ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না। নজরুল এবং বার্জের সারেংকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ভাটা চলায় বার্জ চলাচলের পথ সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। মাঝখানে ছিল একটি বয়া। সেটিকে কাটাতে গিয়ে ধাক্কা লাগে। বাংলাদেশি ১৩ জন নাবিকের স্থলভূমিতে ঢোকার কোনও অনুমতিপত্র নেই। তাই তাঁদের ডাঙায় আনা হয়নি। ওই নাবিকদের অন্য একটি বাংলাদেশি বার্জে রাখা হয়েছে। বার্জটি জলের তলায় কী অবস্থায় রয়েছে, তা বুঝতে সন্ধ্যায় বন্দরের সার্ভেয়ার দল ঘটনাস্থলে যায়।