দলে ফেরাদের নিয়ে অর্পিতা ঘোষ। শুক্রবার বালুরঘাট পুরসভা ভবনে। নিজস্ব চিত্র
গত ২৪ জুন দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে গেরুয়া পতাকা হাতে নিয়েছিলেন দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা পরিষদের ১০ জন সদস্য। তাঁদের প্রাথমিক সদস্যপদও দিয়েছিলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়রা। তিন সপ্তাহও কাটল না, সেই দলের তিন জন ফিরে গেলেন তৃণমূলে। সবে বৃহস্পতিবার জেলা পরিষদের সভাধিপতি লিপিকা রায় নিজের দফতরে গিয়ে বসলেন। তার দু’দিনের মধ্যে হিলির গৌরী মালি, কুমারগঞ্জের ইরা রায় এবং হরিরামপুরের পঞ্চানন বর্মণকে বালুরঘাট পুরসভার সভাকক্ষে এনে জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী অর্পিতা ঘোষ জানান, তিন জনই হলফনামা দিয়ে তৃণমূলে থাকবেন বলে জানিয়েছেন।
জেলা তৃণমূলের লোকজন একে ‘ঘর ওয়াপসি’ বলছেন। অর্পিতার দাবি, বিপ্লব শিবিরে চলে যাওয়া বিশ্বনাথ পাহানও তৃণমূলে ফেরার জন্য যোগাযোগ করেছেন। এই দাবি যদি ঠিক হয়, তা হলে বৃহস্পতিবার যে পাঁচ জনকে নিয়ে জেলা পরিষদের ঘরে ঢুকেছিলেন লিপিকা, তাঁর দিকে সেই ক’জনই রইলেন।
প্রশ্ন উঠেছে, তিন সপ্তাহ আগে দিল্লিতে ১০ জনের দলবদলের পরে যে জেলা পরিষদ নিজেদের বলে দাবি করেছিল বিজেপি, সেটা কি আদৌ তাদের রইল? ১৮ সদস্যের জেলা পরিষদে এখন তা হলে বিজেপির দিকে রইলেন ৭ জন, তৃণমূলের দিকে ১১ জন। অর্পিতার কথায়, ‘‘জেলা পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের জোরে নতুন বোর্ড গঠন করা হবে। ওদের আর সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। ফলে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদ তৃণমূলের দখলেই রইল।’’
নিয়ম মতো, বোর্ড গঠনের পরে আড়াই বছর পর্যন্ত কোনও অনাস্থা আনা যায় না। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি পঞ্চায়েত ভোট হয়েছে। ফলে জেলা পরিষদে তৃণমূল এবং বিজেপি, কেউ কারও বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে চাইলে অপেক্ষা করতে হবে আরও বছর দেড়েক। দু’দলের মধ্যে এই টানাপড়েনে জেলার উন্নয়ন ব্যাহত হবে না তো— এই প্রশ্ন এ দিন তুললেন প্রতিমন্ত্রী বাচ্চু হাঁসদাও।
সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া তৃণমূল নেতা বিপ্লব মিত্র এ দিন বলেন, ‘‘আমরা জোর করে কাউকে আটকে রাখব না।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি শুভেন্দু সরকার দাবি করেন, ‘‘গৌরী মালির বাড়িতে তিন বার হামলা হয়েছে। বাকিদেরও ভয় দেখিয়েছে শাসকদল। তাই চাপে পড়ে তাঁরা তৃণমূলে ফিরতে বাধ্য হলেন।’’ বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে তাঁরা জানাবেন বলে শুভেন্দু দাবি করেন। যদিও তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
তাঁকে কি দলে ফিরতে ভয় দেখানো হয়েছে? জবাবে গৌরী মালি বলেন, ‘‘এত কিছু বলতে পারব না।’’ একই ভাবে পুরনো দলে ফিরে আসা হরিরামপুরের সদস্য পঞ্চানন বর্মণ ও কুমারগঞ্জের ইরা রায় দাবি করেন, তারা নিজেদের ইচ্ছেতেই বিজেপিতে গিয়েছিলেন। আবার এ দিন থেকে তৃণমূলে ফিরে এসে স্বস্তিই পাচ্ছেন।